নিজস্ব প্রতিবেদক:  আগামী ১৮ জানুয়ারি ছয়দিনের সফরে রাজ্যে আসছেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। আর কলকাতায় থাকাকালীন ১৯ ও ২০ জানুয়ারি পর পর দুদিন রাজ্যের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসছেন তিনি। এক সঙ্গে নৈশভোজও সারবেন। ১৯ তারিখের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যের এক ডজন প্রাক্তন আমলা ও পুলিশ কর্তাকে। তার মধ্যে তিন জন প্রাক্তন আইএএস ও নয়জন আইপিএস আধিকারিক।

ওই নয় জনের মধ্যে রাজ্য পুলিশের এক প্রাক্তন ডিজি ও কলকাতার তিন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারও রয়েছে। ওই তিন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারই সিপিএম জমানায় দায়িত্ব সামলেছিলেন এবং আলিমুদ্দিনের বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কী কারণে একসঙ্গে এক ডজন আমলা ও পুলিশ কর্তাকে ডাকা হল, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে রাজ্যের আরএসএস পদাধিকারীরা মুখ খুলতে চাননি।

সূত্রের খবর, যে এক ডজন আমলা ও পুলিশ আধিকারিককে ভাগবতের সঙ্গে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে একজনের মেয়ে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থায় কর্মরত। ওই আধিকারিক এক সময়ে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থায়ও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত বিধানসভা ভোটের আগে মোহন ভাগবতের কলকাতা সফরের সময় এক গাদা ফাইল হাতে তাঁকে মানিকতলায় সঙ্ঘের সদর দফতর কেশব ভবনে দেখা গিয়েছিল। আমন্ত্রিতদের তালিকায় থাকা কলকাতার এক প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের বিশেষ বান্ধবী বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক। ওই পুলিশ আধিকারিক অবসরের পরে রাজ্য সরকারের কোনও কমিটিতে ঢোকার জন্য বিশেষ তদ্বির চালিয়েছিলেন। যদিও তাতে কোনও ফল হয়নি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওই পুলিশ আধিকারিককে বিশ্বাস করতে চাননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।

সরসঙ্ঘচালকের বৈঠকে যে এক ডজন পুলিশ কর্তা আমলাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে দুজন মুসলিম সম্প্রদায়ের। রাজ্যে বার বার চেষ্টা চালিয়েও জাতীয়তাবাদী মুসলিমদের কাছে টানতে ব্যর্থ হয়েছেন সঙ্ঘের ভারপ্রাপ্ত পদাধিকারীরা। নিজেদের সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট কোনও মুখ না থাকায় সঙ্ঘ কিংবা বিজেপিমুখী হননি রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটাররা। আর সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানতে না পারলে রাজ্যে যে হিন্দুত্ববাদী সরকার গঠন করা যাবে না, তা ভালই জানেন সরসঙ্ঘচালক। তাই ওই দুই মুসলিম বুদ্ধিজীবীকে কাছে টানতে আবারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

যদিও মোহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকের আমন্ত্রণ পেলেও রাজ্যের প্রাক্তন আমলা ও পুলিশ কর্তারা যাবেন কিনা তা নিয়ে খানিকটা দোলাচলে পড়েছেন। এক প্রাক্তন পুলিশ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘সরসঙ্ঘচালক কেন বৈঠকে ডেকেছেন তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। ভাগবতজির সফরের উপরে রাজ্য সরকার বিশেষ নজরদারি চালাবে। ফলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তা ভালো চোখে নাও নিতে পারেন। তাই ১৯ তারিখের বৈঠকে যাব কিনা, তা এখনও স্থির করিনি।’