২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রমযানে বাড়বে স্পেশাল হালিমের চাহিদা, আশায় বুক বাঁধছে রেস্তরাঁগুলি

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, বুধবার
  • / 28

সেখ কুতুবউদ্দিনঃ রমযান মাস মানে আত্মশুদ্ধি। ঈমানের মজবুতি। নিজেকে সৎপথে ফিরিয়ে আনা। ১১ মাসের খেয়ালখুশি মতো জীবন কাটানোর পর একমাসের জন্য নিজের ঈমানের পুনর্নবীকরণ করা। রোযা তাই নিছক পানাহার বর্জিত দিন যাপন নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমরা প্রায় রোযা এবং ইফতারকে গুলিয়ে ফেলি। রোযার কথা বলতে গিয়েই অনেকেই ইফতারের কথায় চলে আসি। আসলে মাগরিবের পর যখন একজন রোযাদার  ইফতার করেন, তার ভিতরে অন্য একটা ভালো লাগা কাজ করে। সে অনুভতি যেন স্বর্গীয়। তা বর্ণনার অতীত। রমযানের আর বিশেষ বাকি নেই। মুসলিমের মন রাজ্যে একটা প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাতাসে যেন একটা রোযা রোযা গন্ধ। সে গন্ধ নাক দিয়ে টের পাওয়া যায় না। সে গন্ধ ঈমান দিয়ে অনুভব করতে হয়। তবে একথা ঠিক যে রমযান শুরু হতে না হতেই হালিমের কথা এসে পরে। তৎপরতা শুরু করে দেয় দোকানগুলি।

রমযানে বাড়বে স্পেশাল হালিমের চাহিদা, আশায় বুক বাঁধছে রেস্তরাঁগুলি

আরও পড়ুন: ব্রেকিং: উচ্চ মাধ্যমিক ২০২৩-র রিভিউ-স্ক্রুটিনির ফলাফল প্রকাশ

রমযান স্পেশ্যাল ‘হালিম’-এর মেয়াদ মাত্র এক মাস। তার জন্য  হালিম- প্রিয়দের বছরভর অপেক্ষা করতে হয়। রমযান আসতে আর এক সপ্তাহও বাকী নেই। তার আগে স্পেশাল হালিমের বাজার ধরতে প্রস্তুত রেস্টুরেন্টগুলি।

আরও পড়ুন: শিন্ডের জায়গা নেবেন অজিত! দাবি উদ্ধব শিবিরের

কলকাতায় কয়েক বছর ধরে হালিমের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। মুসলিম সমাজ তো বটেই, অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও হালিম বর্তমানে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ক্রেতার চাহিদা বাড়লেও হালিম কিন্তু বছরভর অধরাই থাকে। কারণ রমযান মাস ছাড়া অন্য সময়ে হালিমের দেখা মেলাই ভার। এদিকে এই একমাসের অতিথির জন্য ক্রেতার ভিড় বছরভরই লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন: প্রকাশিত হল মাধ্যমিকের স্ক্রুটিনির ফলাফল, পরিবর্তন মেধাতালিকায়

শহরের অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট কর্মকর্তাদের মতে একে তো হালিম তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। দ্বিতীয়ত হালিম তৈরির খরচের সাপেক্ষে বছরের অন্য সময় যে পরিমাণ বিক্রি হয় তাতে লাভের মুখ দেখা প্রায় অসম্ভব। এদিকে দিনদিন যেভাবে হালিমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাতে এখন সাড়া বছরই হালিমের খোঁজে মোগলাই খানার দোকানে উৎসুক মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে।

তপসিয়ার সিমলা বিড়ানির এক কর্মী বলেন, হালিম তৈরি করতে অনেক সময় লাগে।  বিভিন্ন রকমের ডাল দিয়ে তৈরি করতে হয়। তার জন্য খরচও ভালই হয়। রমযান মাসে যেহেতু হালিমের চাহিদা খুব বেশি থাকে তাই ওই সময় বিক্রির জন্য লাইন লেগে যায়। তবে বছরের অন্য সময় সেরকম চাহিদা থাকে না।

কিন্তু রমযানে তো হালিমের চাহিদা উর্দ্ধমুখী, তাহলে বছরভর হালিম বিক্রি করতে সমস্যা কোথায়? তিনি বলেন, আপনি ৩০ টাকাতেও ফুটপাথে হালিম পাবেন। তবে আমরা অনেক ধরনের এবং দামি ডাল ব্যবহার করি। তাছাড়া হালিম তৈরির জন্য যে মশলা ব্যবহার করা হয় তার দামও খুব বেশি। তাই আমরা শুধু রমযানের সময়ই হালিম বিক্রি করি। কারণ এই সময় চাহিদা খুব বেশি হওয়ায় তৈরির খরচটা পুষিয়ে যায়। অন্য সময় আমাদের এখানে বা অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে হালিম পাবেন না।

জিসানের মুহম্মদ নাদিম বলেন, ‘হালিম আপনি অন্য সময় পাবেন না। কারণ এটা রমযান স্পেশাল।’

উল্লেখ্য,  আরবের বহু প্রাচীন রান্না ‘হারিসা’  থেকেই ‘হালিম’-এর জন্ম। এদেশের  হায়দরাবাদে নিজামের সৈন্যদলে আরব সৈনিকদের হাত ধরে হালিম প্রবেশ করে এদেশে। মুসলিম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তো বটেই, তার সঙ্গে পাকিস্তান বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন অংশে রমযান মাসে হালিমের চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়।

ভালো মানের ছয় থেকে সাত ধরনের ডাল প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে বিভিন্ন রকমের মসলা এবং খাসি কিংবা গরুর মাংস দিয়ে হালিম তৈরি করা হয়। প্রয়োজনে মুরগীর মাংসও ব্যবহার করা যায়। ভিজিয়ে রাখা ডাল এবং মসলা ও মাংসের মিশ্রণে সাত থেকে আট ঘণ্টার চেষ্টায় তৈরি হয় তরল সুস্বাদু হালিম। হালিম প্রিয়দের একাংশের মতে, হালিম অত্যন্ত ভারী খাবার। দিনভর খালি পেটে থাকার পর তরল হালিম যেমন দেহে খাদ্যের চাহিদা মেটায় তেমন শরীরও ঠিক রাখে। কিন্তু অন্য সময় হালিম হজম করাই বেশ কষ্টকর। তাই রমযান মাসে হালিম খেয়ে কোনও সমস্যা দেখা যায় না।

অবশ্য ফুটপাথের দোকানগুলিতে বছরভর হালিম পাওয়া যায়। নিউমার্কেটে মাত্র ৩০ টাকায় হালিম বিক্রি হয়, তবে রেস্টুরেন্টের এর দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণের বেশি হয়ে থাকে। হালিম বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন,  এখানে তো সারা বছরই হালিম পাওয়া যায়। বিক্রিও খারাপ হয় না। নিউমার্কেট ছাড়াও পার্কসার্কাস, চাঁদনীচক, খিদিরপুর এলাকায় ফুটপাথে হালিম পাওয়া গেলেও অনেকেই রেস্টুরেন্ট থেকে হালিম কিনে বাড়ি নিয়ে যান।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রমযানে বাড়বে স্পেশাল হালিমের চাহিদা, আশায় বুক বাঁধছে রেস্তরাঁগুলি

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, বুধবার

সেখ কুতুবউদ্দিনঃ রমযান মাস মানে আত্মশুদ্ধি। ঈমানের মজবুতি। নিজেকে সৎপথে ফিরিয়ে আনা। ১১ মাসের খেয়ালখুশি মতো জীবন কাটানোর পর একমাসের জন্য নিজের ঈমানের পুনর্নবীকরণ করা। রোযা তাই নিছক পানাহার বর্জিত দিন যাপন নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমরা প্রায় রোযা এবং ইফতারকে গুলিয়ে ফেলি। রোযার কথা বলতে গিয়েই অনেকেই ইফতারের কথায় চলে আসি। আসলে মাগরিবের পর যখন একজন রোযাদার  ইফতার করেন, তার ভিতরে অন্য একটা ভালো লাগা কাজ করে। সে অনুভতি যেন স্বর্গীয়। তা বর্ণনার অতীত। রমযানের আর বিশেষ বাকি নেই। মুসলিমের মন রাজ্যে একটা প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। বাতাসে যেন একটা রোযা রোযা গন্ধ। সে গন্ধ নাক দিয়ে টের পাওয়া যায় না। সে গন্ধ ঈমান দিয়ে অনুভব করতে হয়। তবে একথা ঠিক যে রমযান শুরু হতে না হতেই হালিমের কথা এসে পরে। তৎপরতা শুরু করে দেয় দোকানগুলি।

রমযানে বাড়বে স্পেশাল হালিমের চাহিদা, আশায় বুক বাঁধছে রেস্তরাঁগুলি

আরও পড়ুন: ব্রেকিং: উচ্চ মাধ্যমিক ২০২৩-র রিভিউ-স্ক্রুটিনির ফলাফল প্রকাশ

রমযান স্পেশ্যাল ‘হালিম’-এর মেয়াদ মাত্র এক মাস। তার জন্য  হালিম- প্রিয়দের বছরভর অপেক্ষা করতে হয়। রমযান আসতে আর এক সপ্তাহও বাকী নেই। তার আগে স্পেশাল হালিমের বাজার ধরতে প্রস্তুত রেস্টুরেন্টগুলি।

আরও পড়ুন: শিন্ডের জায়গা নেবেন অজিত! দাবি উদ্ধব শিবিরের

কলকাতায় কয়েক বছর ধরে হালিমের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। মুসলিম সমাজ তো বটেই, অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও হালিম বর্তমানে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ক্রেতার চাহিদা বাড়লেও হালিম কিন্তু বছরভর অধরাই থাকে। কারণ রমযান মাস ছাড়া অন্য সময়ে হালিমের দেখা মেলাই ভার। এদিকে এই একমাসের অতিথির জন্য ক্রেতার ভিড় বছরভরই লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন: প্রকাশিত হল মাধ্যমিকের স্ক্রুটিনির ফলাফল, পরিবর্তন মেধাতালিকায়

শহরের অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট কর্মকর্তাদের মতে একে তো হালিম তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। দ্বিতীয়ত হালিম তৈরির খরচের সাপেক্ষে বছরের অন্য সময় যে পরিমাণ বিক্রি হয় তাতে লাভের মুখ দেখা প্রায় অসম্ভব। এদিকে দিনদিন যেভাবে হালিমের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাতে এখন সাড়া বছরই হালিমের খোঁজে মোগলাই খানার দোকানে উৎসুক মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে।

তপসিয়ার সিমলা বিড়ানির এক কর্মী বলেন, হালিম তৈরি করতে অনেক সময় লাগে।  বিভিন্ন রকমের ডাল দিয়ে তৈরি করতে হয়। তার জন্য খরচও ভালই হয়। রমযান মাসে যেহেতু হালিমের চাহিদা খুব বেশি থাকে তাই ওই সময় বিক্রির জন্য লাইন লেগে যায়। তবে বছরের অন্য সময় সেরকম চাহিদা থাকে না।

কিন্তু রমযানে তো হালিমের চাহিদা উর্দ্ধমুখী, তাহলে বছরভর হালিম বিক্রি করতে সমস্যা কোথায়? তিনি বলেন, আপনি ৩০ টাকাতেও ফুটপাথে হালিম পাবেন। তবে আমরা অনেক ধরনের এবং দামি ডাল ব্যবহার করি। তাছাড়া হালিম তৈরির জন্য যে মশলা ব্যবহার করা হয় তার দামও খুব বেশি। তাই আমরা শুধু রমযানের সময়ই হালিম বিক্রি করি। কারণ এই সময় চাহিদা খুব বেশি হওয়ায় তৈরির খরচটা পুষিয়ে যায়। অন্য সময় আমাদের এখানে বা অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে হালিম পাবেন না।

জিসানের মুহম্মদ নাদিম বলেন, ‘হালিম আপনি অন্য সময় পাবেন না। কারণ এটা রমযান স্পেশাল।’

উল্লেখ্য,  আরবের বহু প্রাচীন রান্না ‘হারিসা’  থেকেই ‘হালিম’-এর জন্ম। এদেশের  হায়দরাবাদে নিজামের সৈন্যদলে আরব সৈনিকদের হাত ধরে হালিম প্রবেশ করে এদেশে। মুসলিম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তো বটেই, তার সঙ্গে পাকিস্তান বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন অংশে রমযান মাসে হালিমের চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়।

ভালো মানের ছয় থেকে সাত ধরনের ডাল প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে বিভিন্ন রকমের মসলা এবং খাসি কিংবা গরুর মাংস দিয়ে হালিম তৈরি করা হয়। প্রয়োজনে মুরগীর মাংসও ব্যবহার করা যায়। ভিজিয়ে রাখা ডাল এবং মসলা ও মাংসের মিশ্রণে সাত থেকে আট ঘণ্টার চেষ্টায় তৈরি হয় তরল সুস্বাদু হালিম। হালিম প্রিয়দের একাংশের মতে, হালিম অত্যন্ত ভারী খাবার। দিনভর খালি পেটে থাকার পর তরল হালিম যেমন দেহে খাদ্যের চাহিদা মেটায় তেমন শরীরও ঠিক রাখে। কিন্তু অন্য সময় হালিম হজম করাই বেশ কষ্টকর। তাই রমযান মাসে হালিম খেয়ে কোনও সমস্যা দেখা যায় না।

অবশ্য ফুটপাথের দোকানগুলিতে বছরভর হালিম পাওয়া যায়। নিউমার্কেটে মাত্র ৩০ টাকায় হালিম বিক্রি হয়, তবে রেস্টুরেন্টের এর দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণের বেশি হয়ে থাকে। হালিম বিক্রেতা আবদুর রহমান বলেন,  এখানে তো সারা বছরই হালিম পাওয়া যায়। বিক্রিও খারাপ হয় না। নিউমার্কেট ছাড়াও পার্কসার্কাস, চাঁদনীচক, খিদিরপুর এলাকায় ফুটপাথে হালিম পাওয়া গেলেও অনেকেই রেস্টুরেন্ট থেকে হালিম কিনে বাড়ি নিয়ে যান।