২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘গেরুয়া’ পাঠ্যপুস্তকেই শিলমোহর কর্নাটক সরকারের! 

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৭ জুন ২০২২, সোমবার
  • / 38

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  কর্নাটক সরকার রোহিত চক্রতীর্থ কমিটির দেওয়া পরামর্শ অনুসারে বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তকগুলিকে প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তেই অনড় থাকল।

কয়েকজন লেখকের নাম এই পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন পি লঙ্কেশ, সারা আবুবাকার, এ এন মূর্তি রাও, মুদনাকুডু চিন্নাস্বামী, এইচএস শিবপ্রকাশ। কন্নড় লেখকরা কমিটির বিরুদ্ধে ‘অসংবিধানিক’, ‘অপ্রতিনিধিত্বকারী,’ ‘গৈরিকীকরণের’ অভিযোগ তুলেছেন।

আরও পড়ুন: মুসলিম যুবককে হত্যা, প্রতিবাদে গণইস্তফা কর্নাটকের সংখ্যালঘু নেতাদের

 

আরও পড়ুন: সরকারি ট্রেন্ডারে মুসলিমদের ৪ শতাংশ সংরক্ষণ, সিদ্ধান্ত কর্নাটক সরকারের

লেখক জি রামকৃষ্ণ এক বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কমিটি আসলে বইটির মধ্যেও গৈরিকীকরণের ছাপ ধরে রাখতে চায়। নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষার পদ্ধতি খুব ভালোভাবে বোঝানো হয়েছে। তবে পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে একটি আবেগ কাজ করছে, সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষানীতির জন্য অনেক সময় আবেগ ছাড়তে হয়।’

আরও পড়ুন: ৪ হাজার কোটির বিনিয়োগ, প্রচুর কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলছে কর্ণাটকে

 

দলিত কবি মুন্দাকুদু চিন্নাস্বামী তিনি ‘ভগবা ধ্বজা’ শব্দটি ব্যবহার করে বলেন, কমিটি ‘ভগবা’ সরিয়ে দিয়ে শুধু ‘ধ্বজা’কে বজায় রাখছে। এটি কি প্রতারণা নয়? এটা অন্যায়। আসল মূল লেখক নিজেই সেটি বোঝেন না। এটি ‘ম্যানিপুলেশন’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কারণেই আমরা প্রতিবাদ করেছি। পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়ে গৈরিকীকরণ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিক্ষানীতিতে তাদের উদ্দেশ্যগুলি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আবেগও বোঝা যায়। কিন্তু অ্যাকাডেমিক শিক্ষানীতির জন্য অনেক আবেগ ছেড়ে দিতে হয়।’

 

জাতীয় কবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাষ্ট্রকবি কুভেম্পু প্রতিষ্ঠানা। এই ঘটনায় হাম্পা নাগারাইয়া রাজ্য কবি কুভেম্পুকে অপমানের কারণে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্নাটক সরকারের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন।  ঘটনায় ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং জনতা দল(সেক্যুলার), বিশ্ব মানবীয়তে মাত্তু কুভেম্পু হোরাতা স্মিথির মতো সংগঠন এবং দলিত বুদ্ধিজীবীরা প্রস্তাবিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কর্নাটক সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করেছে। কর্নাটক কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ডি কে শিবকুমার, এবং জনতা দল (এস) সুপ্রিমো দেবেগৌড়া একই মঞ্চ থেকে পাঠ্যপুস্তকের রিভিউ কমিটির তীব্র নিন্দা করে। কেপিসিসি সভাপতি নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাখ্যান করার জন্য একটি পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে ফেলেন। এদিকে এই ঘটনায় তোপ দেগে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই বলেন, কংগ্রেসের সিদ্ধারামাইয়া সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তকে আরও ভুল ছিল। রাজস্ব মন্ত্রী আর অশোকাও অনড় মনোভাব পোষণ করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সরকার সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকগুলি প্রত্যাহার করবে না।

উল্লেখ্য, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গত মাসে। রাজ্যের পিইউসি কলেজগুলির ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ে কথিত সংশোধন নিয়ে গত মাসে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকেই পাঠ্য পুস্তকে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলে পর্যালোচনা কমিটির প্রধান রোহিত চক্রতীর্থের বরখাস্তের দাবি তোলে। রোহিত চক্রতীর্থের বিরুদ্ধে পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়ে ডানপন্থী মতাদর্শের প্রচার, স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজ সংস্কারক, বিশিষ্টি সাহিত্যিকদের লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলি বাদ দেওয়া সহ ২০১৭ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে কর্নাটক রাজ্যের সংগীতের প্রতি অসম্মান দেখানোর অভিযোগ ওঠে। এর পর পরই অনেক পণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম কবি চন্দ্রশেখর তালিয়া পাঠ্যপুস্তকের তাদের কাজ ব্যবহারের অনুমতি প্রত্যাহার করে।  পণ্ডিত তালিয়া সেই সময় পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তোলেন। রূপা হাসান, জি রামকৃষ্ণা, দেবকুমার মহাদেবা সহ আরও অনেক লেখক রোহিত চক্রতীর্থ কমিটির বিরুদ্ধে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলে সরব হন।এই তুমুল বিতর্কের মধ্যে হস্তক্ষেপ করে কর্নাটক সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসরাজ বোম্মাই সেই সময় বলেন, যদি পাঠ্যপুস্তকে কোনও আপত্তিকর কিছু তাহলে সরকার তা সংশোধন করার জন্য প্রস্তুত।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘গেরুয়া’ পাঠ্যপুস্তকেই শিলমোহর কর্নাটক সরকারের! 

আপডেট : ২৭ জুন ২০২২, সোমবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক:  কর্নাটক সরকার রোহিত চক্রতীর্থ কমিটির দেওয়া পরামর্শ অনুসারে বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তকগুলিকে প্রত্যাহার না করার সিদ্ধান্তেই অনড় থাকল।

কয়েকজন লেখকের নাম এই পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন পি লঙ্কেশ, সারা আবুবাকার, এ এন মূর্তি রাও, মুদনাকুডু চিন্নাস্বামী, এইচএস শিবপ্রকাশ। কন্নড় লেখকরা কমিটির বিরুদ্ধে ‘অসংবিধানিক’, ‘অপ্রতিনিধিত্বকারী,’ ‘গৈরিকীকরণের’ অভিযোগ তুলেছেন।

আরও পড়ুন: মুসলিম যুবককে হত্যা, প্রতিবাদে গণইস্তফা কর্নাটকের সংখ্যালঘু নেতাদের

 

আরও পড়ুন: সরকারি ট্রেন্ডারে মুসলিমদের ৪ শতাংশ সংরক্ষণ, সিদ্ধান্ত কর্নাটক সরকারের

লেখক জি রামকৃষ্ণ এক বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কমিটি আসলে বইটির মধ্যেও গৈরিকীকরণের ছাপ ধরে রাখতে চায়। নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষার পদ্ধতি খুব ভালোভাবে বোঝানো হয়েছে। তবে পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে একটি আবেগ কাজ করছে, সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষানীতির জন্য অনেক সময় আবেগ ছাড়তে হয়।’

আরও পড়ুন: ৪ হাজার কোটির বিনিয়োগ, প্রচুর কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলছে কর্ণাটকে

 

দলিত কবি মুন্দাকুদু চিন্নাস্বামী তিনি ‘ভগবা ধ্বজা’ শব্দটি ব্যবহার করে বলেন, কমিটি ‘ভগবা’ সরিয়ে দিয়ে শুধু ‘ধ্বজা’কে বজায় রাখছে। এটি কি প্রতারণা নয়? এটা অন্যায়। আসল মূল লেখক নিজেই সেটি বোঝেন না। এটি ‘ম্যানিপুলেশন’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কারণেই আমরা প্রতিবাদ করেছি। পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়ে গৈরিকীকরণ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিক্ষানীতিতে তাদের উদ্দেশ্যগুলি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আবেগও বোঝা যায়। কিন্তু অ্যাকাডেমিক শিক্ষানীতির জন্য অনেক আবেগ ছেড়ে দিতে হয়।’

 

জাতীয় কবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাষ্ট্রকবি কুভেম্পু প্রতিষ্ঠানা। এই ঘটনায় হাম্পা নাগারাইয়া রাজ্য কবি কুভেম্পুকে অপমানের কারণে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্নাটক সরকারের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন।  ঘটনায় ইতিমধ্যেই কংগ্রেস এবং জনতা দল(সেক্যুলার), বিশ্ব মানবীয়তে মাত্তু কুভেম্পু হোরাতা স্মিথির মতো সংগঠন এবং দলিত বুদ্ধিজীবীরা প্রস্তাবিত পাঠ্যপুস্তক নিয়ে কর্নাটক সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করেছে। কর্নাটক কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ডি কে শিবকুমার, এবং জনতা দল (এস) সুপ্রিমো দেবেগৌড়া একই মঞ্চ থেকে পাঠ্যপুস্তকের রিভিউ কমিটির তীব্র নিন্দা করে। কেপিসিসি সভাপতি নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাখ্যান করার জন্য একটি পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে ফেলেন। এদিকে এই ঘটনায় তোপ দেগে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই বলেন, কংগ্রেসের সিদ্ধারামাইয়া সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তকে আরও ভুল ছিল। রাজস্ব মন্ত্রী আর অশোকাও অনড় মনোভাব পোষণ করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সরকার সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকগুলি প্রত্যাহার করবে না।

উল্লেখ্য, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গত মাসে। রাজ্যের পিইউসি কলেজগুলির ইতিহাসের পাঠ্য বইয়ে কথিত সংশোধন নিয়ে গত মাসে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকেই পাঠ্য পুস্তকে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলে পর্যালোচনা কমিটির প্রধান রোহিত চক্রতীর্থের বরখাস্তের দাবি তোলে। রোহিত চক্রতীর্থের বিরুদ্ধে পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়ে ডানপন্থী মতাদর্শের প্রচার, স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজ সংস্কারক, বিশিষ্টি সাহিত্যিকদের লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলি বাদ দেওয়া সহ ২০১৭ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে কর্নাটক রাজ্যের সংগীতের প্রতি অসম্মান দেখানোর অভিযোগ ওঠে। এর পর পরই অনেক পণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম কবি চন্দ্রশেখর তালিয়া পাঠ্যপুস্তকের তাদের কাজ ব্যবহারের অনুমতি প্রত্যাহার করে।  পণ্ডিত তালিয়া সেই সময় পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তোলেন। রূপা হাসান, জি রামকৃষ্ণা, দেবকুমার মহাদেবা সহ আরও অনেক লেখক রোহিত চক্রতীর্থ কমিটির বিরুদ্ধে গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলে সরব হন।এই তুমুল বিতর্কের মধ্যে হস্তক্ষেপ করে কর্নাটক সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসরাজ বোম্মাই সেই সময় বলেন, যদি পাঠ্যপুস্তকে কোনও আপত্তিকর কিছু তাহলে সরকার তা সংশোধন করার জন্য প্রস্তুত।