মুখে দাড়ি, কাশ্মীরি চিকিৎসককে ডাক্তারিতে ভর্তি নিল না বেসরকারি হাসপাতাল

- আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার
- / 8
শ্রীনগর: চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে আরও বেশি পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন কাশ্মীরি এক চিকিৎসক। কিন্তু বাধ সাধল মুখের দাড়ি। ডাক্তারি পড়তে হলে দাড়ি কামাতে হবে। কর্তৃপক্ষের এই দাবি না মানায় চিকিৎসককে ভর্তি নিল না এক বেসরকারি হাসপাতাল। চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডক্টরেট অফ ন্যাশনাল বোর্ডের আসন তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। কারণ তাকে সুপার স্পেশালিটি ইনস্টিটিউটে পড়ার জন্য দাড়ি কামাতে বলা হয়েছিল।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জম্মু ও কাশ্মীরের ওই চিকিৎসক দাবি করেছেন, চলমান এনইইটি সুপার স্পেশালিটি (এসএস) কাউন্সেলিংয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডের সময় কোভাই মেডিকেল সেন্টার ও হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে একটি আসন বরাদ্দ করা হয়েছিল। তার মতে, যখন তিনি ভর্তি হতে ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলেন, তখন তাকে একটি নীতি নথিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, দাড়ি নিষিদ্ধ। সতর্ক করে বলা হয়েছিল যে এই নীতি মেনে না চলতে তাকে বাদ দেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, কর্তৃপক্ষের ওই নীতি মানতে চাননি চিকিৎসক। যেহেতু দাড়ি তার বিশ্বাস এবং ধর্মীয় পরিচয়ের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। তাই তিনি হাসপাতালে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নেন। এখন তৃতীয় দফার কাউন্সেলিংয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “আমাকে বলা হয়েছিল যে ইনস্টিটিউটের একটি ড্রেস কোড রয়েছে, যার মধ্যে দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ রয়েছে। আমি ব্যাখ্যা করেছিলাম যে আমি ড্রেস কোড অনুসরণ করতে প্রস্তুত, এমনকি মুখোশ দিয়ে আমার দাড়ি লুকাতে প্রস্তুত। তবে এটি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। ইনস্টিটিউটের পরিচালক বলেন, এটি একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং এই নীতিটি চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠা করেছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।”
তিনি বলেন, শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে এমবিবিএস, এমডি বা সিনিয়র রেসিডেন্সি বছরগুলিতে তিনি এই জাতীয় বিধিনিষেধের মুখোমুখি হননি। কাউন্সেলিংয়ের সময় যদি নীতিটি প্রকাশ করা হত, তবে তিনি ইনস্টিটিউটে আবেদন করতেন না।
“আমি বিনীতভাবে বলি যে দাড়ি রাখা আমার ইসলামী বিশ্বাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এবং ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে আমার কাছ থেকে এ বিষয়ে আপস আশা করা যায় না, যেখানে ভারতীয় সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, চিকিৎসা প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন দক্ষতা, নৈতিকতা এবং রোগীর যত্নের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত – ব্যক্তিগত চেহারা নয় যা স্বাস্থ্যবিধি বা সুরক্ষায় বাধা দেয় না।” এই ঘটনার পর অভিযোগ দায়েরে করেন ওই চিকিৎসক। অভিযোগ পাওয়ার পর ন্যাশনাল বোর্ড অফ এক্সামিনেশন ইন মেডিকেল সায়েন্সেস (এনবিইএমএস) পদক্ষেপ নেয়। বেসরকারি ওই হাসপাতালকে প্রার্থীকে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। যদি তিনি সমস্ত যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করেন। যদিও কাশ্মীরি চিকিৎসক বলেন, “আমি আর ওই ইনস্টিটিউটে পড়তে চাই না। কারণ তারা পরবর্তী তিন বছর ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। মামলা মোকদ্দমার কোনও মানে হয় না, কারণ চেয়ারম্যান একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং আমি চাপে পড়ব।”
শ্রীনগরের সাংসদ আগা সৈয়দ রুহুল্লাগ মেহেদি বলেছেন, “একজন কাশ্মীরি মুসলিম চিকিৎসককে তার জায়গা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যোগ্যতার অভাবে নয়, বরং মুখে দাড়ি রাখার জন্য।” এবিষয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।