ইসরাইলি অবরোধে মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে গাজার ২,৯০,০০০ শিশু

- আপডেট : ৪ মে ২০২৫, রবিবার
- / 592

মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি শিবিরে তার পারিবারিক তাঁবুতে সাত বছর বয়সী আহমেদ আল-শেখ ঈদ, যার অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
পুবের কলম ডেস্ক: গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস (জিএমও) জানিয়েছে, পাঁচ বছরের নিচে ৩,৫০০-রও বেশি শিশু এখনই অনাহারে মৃত্যুর মুখে। এছাড়া, চরম অপুষ্টিজনিত কারণে অন্তত ৭০,০০০ শিশু বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা পূর্ণ ইসরাইলি অবরোধে গাজা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
রবিবার টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জিএমও জানায়, “এই পরিকল্পিত অবরোধের আওতায় পাঁচ বছরের নিচে ৩,৫০০ শিশু এখনই অনাহারে মৃত্যুর মুখে, এবং প্রায় ২,৯০,০০০ শিশু মৃত্যুর প্রান্তসীমায় অবস্থান করছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যখন প্রতিদিন ১১ লাখ শিশু ন্যূনতম পুষ্টি পায় না, তখন এই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে — যেখানে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, এবং বিশ্বব্যাপী নীরবতা এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডকে মদত দিচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ৫৭ জন ফিলিস্তিনি ইতিমধ্যেই অনাহারে মারা গেছেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তবুও, ইসরাইল এখনো ২৩ লাখ মানুষের এই ভূখণ্ডে মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা জানিয়েছে, খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহের মারাত্মক ঘাটতি গাজাকে একটি সম্পূর্ণ অনাহার পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। অপুষ্টি রোধ ও চিকিৎসার জন্য যেসব উপকরণ দরকার, তা ইতোমধ্যেই প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। আর এই সময়ে অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
যেটুকু খাদ্যপণ্য বাজারে পাওয়া যায়, তার মূল্য এতটাই বেশি যে সাধারণ গাজাবাসীর পক্ষে তা কেনা অসম্ভব। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখন আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং সাহায্য সংগঠন সরাসরি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারা যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করছে। ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য প্রবাহ বন্ধ রেখে, গাজার শিশুরা যেন মারা যায় – এটাই যেন উদ্দেশ্য।
ইসরাইল যদিও বলে আসছে, অবরোধ প্রয়োজনীয় কারণ তারা হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরাইলিদের মুক্তি চায়। বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন বন্দির মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২,৪৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,১৮,৩৬৬ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি – তারা বলছে, অন্তত ৬১,৭০০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন এবং তারা সবাই মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যখন শিশুদের মৃত্যুর খবর এবং অনাহারে কাতর মুখ বিশ্বজুড়ে নাড়া দিচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা সরাসরি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং যুদ্ধ অপরাধের আওতায় পড়ে। তবুও কার্যকর কোনও চাপ বা নিষেধাজ্ঞা এখনো গাজায় মানবিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারেনি।
এখন গাজা যেন এক মৃত্যুকূপ – যেখানে প্রতিটি দিন শিশুর কান্না, খাদ্যের জন্য আকুতি, ও ধ্বংসস্তূপে লাশ খোঁজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে। বিশ্ব কি এখনও নীরব থাকবে?



