১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী রায়: কলেজ ভর্তি ও চাকরির নিয়োগে কোনও বাধা নেই

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 28

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কলকাতা হাই কোর্ট মঙ্গলবার (১৮ জুন) ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণা করেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। তবে কলেজে ভর্তি এবং চাকরির নিয়োগে এই নির্দেশের কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

আদালত পুনরায় জানায়, এ ধরনের রায়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া উচিত নয়। অতীতে একাধিকবার আদালত একই কথা বলেছে।

২০২৪ সালের মে মাসে হাই কোর্ট জানায়, ২০১০ সালের পর যাঁরা ওবিসি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের শংসাপত্র বাতিল। ২০১০ সালের আগে ঘোষিত ৬৬টি জনগোষ্ঠীর ওবিসি শংসাপত্রই কেবল বৈধ। এর বাইরে ২০১০-২০১২ সালে বাম ও তৃণমূল সরকারের আমলে যুক্ত হওয়া ৭৭টি নতুন জনগোষ্ঠী বাতিল হয়েছে।

আরও পড়ুন: ওবিসি বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতাদেশ আদালতের, প্রশ্নের মুখে ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া  

স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ ছিল, নতুন ওবিসি প্যানেল তৈরি করতে হবে। বিচারপতি কৌশিক চন্দ এই নির্দেশ দেন। আদালত পরিষ্কার জানায়, ২০১০-এর পরের ওবিসি সার্টিফিকেট কোনও ক্ষেত্রেই গ্রাহ্য নয়।

আরও পড়ুন: BREAKING, ওবিসি মামলায় নয়া জট, হাইকোর্টে নতুন মামলা, তড়িঘড়ি নয়া ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ

মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী জানান, এনসিবিসি-র বৈঠকে দুটি সম্প্রদায়ের পরিবর্তনের ফলে ডেঞ্জারাস ডেমোগ্রাফিক এফেক্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পাল্টা রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত জানান, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং সমীক্ষার কথা সেখানে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসসি, এসটি ও ওবিসি কোটায় স্থগিতাদেশ বোম্বে হাইকোর্টের

হাই কোর্ট প্রশ্ন তোলে, বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য কিছু বলেছে কি না। এজি জানান, পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে, তালিকা জমা দেওয়া হবে। তবে বিচারপতিরা বলেন, ৬৬টি জনগোষ্ঠী নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই, বরং বাকি তালিকা নিয়েই মামলা চলছে।

সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওবিসি তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব ছিল অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের, সরকারের নয়। এই তথ্য সাধারণ মানুষকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে বলে মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন তিনি। তালিকায় ৮০টি সংখ্যালঘু ও ৬০টি অমুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুন তালিকায় অনেক মুসলিম সম্প্রদায় ‘ওবিসি-এ’ থেকে ‘ওবিসি-বি’-তে এবং উল্টোটাও হয়েছে, যা নিয়ে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালের ২২ মে হাই কোর্ট রাজ্যের ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে। সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হলেও কোনও স্থগিতাদেশ মেলেনি। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানায়, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ বৈধ নয়।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, ওবিসি তালিকা নিয়ে বিধানসভায় তাঁকে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ১১ জুন তিনি সচিবকে চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর জানায়, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কিন্তু কলেজে ভর্তি বন্ধ থাকবে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু ভর্তি প্রক্রিয়া থামানো যাবে না।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় হাই কোর্টের অন্তর্বর্তী রায়: কলেজ ভর্তি ও চাকরির নিয়োগে কোনও বাধা নেই

আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: কলকাতা হাই কোর্ট মঙ্গলবার (১৮ জুন) ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণা করেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। তবে কলেজে ভর্তি এবং চাকরির নিয়োগে এই নির্দেশের কোনও প্রভাব পড়বে না বলে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

আদালত পুনরায় জানায়, এ ধরনের রায়ে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া উচিত নয়। অতীতে একাধিকবার আদালত একই কথা বলেছে।

২০২৪ সালের মে মাসে হাই কোর্ট জানায়, ২০১০ সালের পর যাঁরা ওবিসি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁদের শংসাপত্র বাতিল। ২০১০ সালের আগে ঘোষিত ৬৬টি জনগোষ্ঠীর ওবিসি শংসাপত্রই কেবল বৈধ। এর বাইরে ২০১০-২০১২ সালে বাম ও তৃণমূল সরকারের আমলে যুক্ত হওয়া ৭৭টি নতুন জনগোষ্ঠী বাতিল হয়েছে।

আরও পড়ুন: ওবিসি বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতাদেশ আদালতের, প্রশ্নের মুখে ভর্তি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া  

স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ ছিল, নতুন ওবিসি প্যানেল তৈরি করতে হবে। বিচারপতি কৌশিক চন্দ এই নির্দেশ দেন। আদালত পরিষ্কার জানায়, ২০১০-এর পরের ওবিসি সার্টিফিকেট কোনও ক্ষেত্রেই গ্রাহ্য নয়।

আরও পড়ুন: BREAKING, ওবিসি মামলায় নয়া জট, হাইকোর্টে নতুন মামলা, তড়িঘড়ি নয়া ওবিসি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ

মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোককুমার চক্রবর্তী জানান, এনসিবিসি-র বৈঠকে দুটি সম্প্রদায়ের পরিবর্তনের ফলে ডেঞ্জারাস ডেমোগ্রাফিক এফেক্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পাল্টা রাজ্যের এজি কিশোর দত্ত জানান, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং সমীক্ষার কথা সেখানে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসসি, এসটি ও ওবিসি কোটায় স্থগিতাদেশ বোম্বে হাইকোর্টের

হাই কোর্ট প্রশ্ন তোলে, বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য কিছু বলেছে কি না। এজি জানান, পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে, তালিকা জমা দেওয়া হবে। তবে বিচারপতিরা বলেন, ৬৬টি জনগোষ্ঠী নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই, বরং বাকি তালিকা নিয়েই মামলা চলছে।

সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওবিসি তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব ছিল অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের, সরকারের নয়। এই তথ্য সাধারণ মানুষকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে বলে মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন তিনি। তালিকায় ৮০টি সংখ্যালঘু ও ৬০টি অমুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুন তালিকায় অনেক মুসলিম সম্প্রদায় ‘ওবিসি-এ’ থেকে ‘ওবিসি-বি’-তে এবং উল্টোটাও হয়েছে, যা নিয়ে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালের ২২ মে হাই কোর্ট রাজ্যের ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে। সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হলেও কোনও স্থগিতাদেশ মেলেনি। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানায়, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ বৈধ নয়।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, ওবিসি তালিকা নিয়ে বিধানসভায় তাঁকে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ১১ জুন তিনি সচিবকে চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর জানায়, ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কিন্তু কলেজে ভর্তি বন্ধ থাকবে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু ভর্তি প্রক্রিয়া থামানো যাবে না।