২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানের ইসফাহানে ইসরাইলের হামলা, পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন, তেহরানে আতঙ্ক

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 40

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের ইসফাহান প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরাইল হামলা চালিয়েছে। শনিবার ভোরে ইসফাহান শহরের একটি পাহাড়ঘেঁষা এলাকায় ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়, যেখানে ইসরাইলি বিমান হামলার পর দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হামলার ফলে কোনো রেডিয়েশন লিকের ঘটনা ঘটেনি।

ইরানের ইসফাহানে ইসরাইলের হামলা, পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন, তেহরানে আতঙ্ক
ইরানের ইসফাহান সমৃদ্ধকরণ সুবিধার একটি উপগ্রহ চিত্র (Sattelite image)

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইসফাহানে হামলা চালাল ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিপক্ষ দেশের মধ্যে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘর্ষ চলছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩০ জন নিহত এবং প্রায় ৩,৫০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসফাহানের হামলায় কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ইরানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, দক্ষিণ ইরানের শিরাজ শহরের একটি সামরিক স্থাপনাতেও ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরানে মাটির নিচে থাকা পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালাতে অক্ষম ইসরাইল: দাবি ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বার্তা

অন্যদিকে, তেল আবিব শহরের উপরেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শহরের কিছু বহুতল আবাসিক ভবনে আগুন লেগে যায়। ইসরাইলের জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার পর তার ধ্বংসাবশেষ থেকে এই আগুনের সূত্রপাত।

আরও পড়ুন: ইরানে ৩টি হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিল ইসরাইল, নীরব বিশ্ব বিবেক

ইসরাইলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এটি দু’দেশের মধ্যে চলমান সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: শুক্রবার ইউরোপের তিন দেশের সঙ্গে ইরানের বৈঠক!

এদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জানিয়েছেন, তারা ইরানের কুদস ফোর্সের অধীনস্ত প্যালেস্টাইন কর্পসের নেতা সাঈদ ইজাদি-কে হত্যা করেছে। কওম শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে চালানো বিমান হামলায় ইজাদি নিহত হন বলে জানানো হয়েছে। কাটজ একে ইসরাইলি গোয়েন্দা ও বিমানবাহিনীর জন্য “বড় সাফল্য” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের ইসরাইল হামলার আগে ইজাদি আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র দিয়েছিলেন।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় তাদের পাঁচজন সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে সাঈদ ইজাদির নাম উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, ইজাদির নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ছিল।

১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ইসরাইল প্রথমে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার জবাবে ইরান পাল্টা হামলা চালায়।

ইসরাইলের দাবি, তারা ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা থামাতে এই হামলা চালিয়েছে। যদিও ইরান তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি কমিয়ে আনার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনায় ছিল।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই, যদিও তারা বেসামরিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।

তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার দাবি করেন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড “ভুল” বলছেন যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।

ইরানের সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি আল জাজিরাকে জানান, “আমরা অন্য পক্ষের কথা শোনায় বিশ্বাস করি। তাই আমাদের কূটনীতিকেরা জেনেভায় উপস্থিত আছেন। তবে সব আলোচনার সূচনা হওয়া উচিত ইসরাইলের হামলাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে।”

তেহরান থেকে  এক সংবাদ প্রতিবেদক জানিয়েছেন, “ইরানিরা ক্ষুব্ধ, কারণ শুধু পারমাণবিক বা সামরিক স্থাপনাই নয়, সাধারণ মানুষকেও প্রতিদিন হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “অনেকে রাজধানী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু তেহরান শহরে ১ কোটি এবং পুরো প্রদেশে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এতে আশপাশের এলাকাগুলির উপরও ব্যাপক চাপ পড়ছে।”

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইরানের ইসফাহানে ইসরাইলের হামলা, পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন, তেহরানে আতঙ্ক

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরানের ইসফাহান প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরাইল হামলা চালিয়েছে। শনিবার ভোরে ইসফাহান শহরের একটি পাহাড়ঘেঁষা এলাকায় ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়, যেখানে ইসরাইলি বিমান হামলার পর দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হামলার ফলে কোনো রেডিয়েশন লিকের ঘটনা ঘটেনি।

ইরানের ইসফাহানে ইসরাইলের হামলা, পারমাণবিক কেন্দ্রে আগুন, তেহরানে আতঙ্ক
ইরানের ইসফাহান সমৃদ্ধকরণ সুবিধার একটি উপগ্রহ চিত্র (Sattelite image)

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইসফাহানে হামলা চালাল ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিপক্ষ দেশের মধ্যে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘর্ষ চলছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৩০ জন নিহত এবং প্রায় ৩,৫০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসফাহানের হামলায় কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ইরানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, দক্ষিণ ইরানের শিরাজ শহরের একটি সামরিক স্থাপনাতেও ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরানে মাটির নিচে থাকা পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালাতে অক্ষম ইসরাইল: দাবি ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বার্তা

অন্যদিকে, তেল আবিব শহরের উপরেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শহরের কিছু বহুতল আবাসিক ভবনে আগুন লেগে যায়। ইসরাইলের জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার পর তার ধ্বংসাবশেষ থেকে এই আগুনের সূত্রপাত।

আরও পড়ুন: ইরানে ৩টি হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিল ইসরাইল, নীরব বিশ্ব বিবেক

ইসরাইলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এটি দু’দেশের মধ্যে চলমান সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: শুক্রবার ইউরোপের তিন দেশের সঙ্গে ইরানের বৈঠক!

এদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জানিয়েছেন, তারা ইরানের কুদস ফোর্সের অধীনস্ত প্যালেস্টাইন কর্পসের নেতা সাঈদ ইজাদি-কে হত্যা করেছে। কওম শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে চালানো বিমান হামলায় ইজাদি নিহত হন বলে জানানো হয়েছে। কাটজ একে ইসরাইলি গোয়েন্দা ও বিমানবাহিনীর জন্য “বড় সাফল্য” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের ইসরাইল হামলার আগে ইজাদি আর্থিক সহায়তা ও অস্ত্র দিয়েছিলেন।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় তাদের পাঁচজন সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে সাঈদ ইজাদির নাম উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, ইজাদির নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ছিল।

১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে ইসরাইল প্রথমে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার জবাবে ইরান পাল্টা হামলা চালায়।

ইসরাইলের দাবি, তারা ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা থামাতে এই হামলা চালিয়েছে। যদিও ইরান তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি কমিয়ে আনার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনায় ছিল।

আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই, যদিও তারা বেসামরিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।

তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার দাবি করেন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড “ভুল” বলছেন যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না।

ইরানের সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি আল জাজিরাকে জানান, “আমরা অন্য পক্ষের কথা শোনায় বিশ্বাস করি। তাই আমাদের কূটনীতিকেরা জেনেভায় উপস্থিত আছেন। তবে সব আলোচনার সূচনা হওয়া উচিত ইসরাইলের হামলাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে।”

তেহরান থেকে  এক সংবাদ প্রতিবেদক জানিয়েছেন, “ইরানিরা ক্ষুব্ধ, কারণ শুধু পারমাণবিক বা সামরিক স্থাপনাই নয়, সাধারণ মানুষকেও প্রতিদিন হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “অনেকে রাজধানী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু তেহরান শহরে ১ কোটি এবং পুরো প্রদেশে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এতে আশপাশের এলাকাগুলির উপরও ব্যাপক চাপ পড়ছে।”