ভারতের সংবিধানই এই অস্পৃশ্যকে সর্বোচ্চ পদে বসিয়েছে : গাভাই

- আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 57
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ভারতের সংবিধানকে কালির অক্ষরে লেখা এক শান্ত বিপ্লব বলে অভিহিত করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। এখানে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের এক অনুষ্ঠানে ভাষণে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, সংবিধান শুধু আমাদের অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়নি।
একইসঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত মানুষজনকে অন্ধকার থেকে আলোয় তুলে আনার কাজও করেছে। স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতের সামাজিক অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বহু দশক আগে আমাদের ভারতের লক্ষ লক্ষ নাগরিককে বলা হত অস্পৃশ্য। তাদের অপবিত্র বলে মনে করা হত। তাদের যাপনের অধিকার ছিল না, নিজের কথা বলার অধিকার ছিল না।
কিন্তু আম্বেদকরের মতো সংবিধান প্রণেতারা মনে করেছিলেন, সামাজিক গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত না হলে গণতন্ত্র স্থায়ী হয় না। তাঁদের অধিকার প্রদানের ফলে আজ আমার মতো একজন, যিনি ওই অস্পৃশ্যদের দলেই ছিলেন, তিনি আজ সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ পদে বসতে পেরেছেন।
দ্বিতীয় দলিত এবং প্রথম বৌদ্ধ আমি যে এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছি। নিজের জীবনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গাভাই বলেন, ছোট শহরের পুরসভার স্কুলে পড়াশোনা করেছি। সেই পুর বিদ্যালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার সফরে এই সংবিধান নির্দেশিকার মতো কাজ করেছে।
গাভাই ভারতের সংবিধানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, যাদের যাপনের অধিকার ছিল না, নিজের কথা বলার অধিকার ছিল না, সেই তথাকথিত অস্পৃশ্যদের সংবিধান সমাজ এবং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার সমানাধিকার দিয়েছে।
তাই ভারতের সংবিধান শুধু রাজনৈতিক রূপরেখা বা আইনি সনদ নয়, এ এক অনুভব, এক জীবনদায়ী শক্তি। সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে ছিলেন দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষজনের, দলিত, আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মহিলা, প্রতিবন্ধী, এমনকী সমাজে যাদের অপরাধী উপজাতি হিসেবে গণ্য করা হত, তাঁদের প্রতিনিধিরাও।
সেই কারণেই আমাদের সংবিধান হয়ে উঠেছে সামাজিক নথি বা দলিল, যা জাতপাত, দারিদ্র্য, অনাচার এবং বহির্মুখী যাতনা উপেক্ষা করতে পারে না। এই সংবিধান রাষ্ট্রকে শুধু অধিকার রক্ষায় বাধ্য করে না, একইসঙ্গে অধিকার ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে, তাকে সুনির্দিষ্ট করতে এবং যেখানে ক্ষত তৈরি হবে তা মেরামত করতেও বাধ্য করে।
আম্বেদকরের বন্দনা করে গাভাই বলেন, তাঁর দূরদৃষ্টি ছিল, তিনি বুঝেছিলেন যে, জাতপাতের মাতামাতি এবং স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা যাতে না মাথাচাড়া দেয় তার জন্য রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব রক্ষাকবচের কাজ করবে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার সমবণ্টন নয়, সামাজিক মর্যাদার সমানভাগ করার ক্ষেত্রেও এটি কাজ করবে বলে তিনি মনে করেছিলেন।
তিনি বুঝেছিলেন, ক্ষমতা সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে সমবণ্টন না হলে গণতন্ত্র টিকবে না। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রবাদপ্রতিম রায়গুলির উল্লেখ করে বলেন, সংবিধানের ৭৫তম বর্ষপূর্তিতেও ভাবা হচ্ছে, কীভাবে প্রতিনিধিত্ব যথাযথ রূপায়িত হয়, আরও নবীকরণ করা যায়, আরও আলোকদীপ্ত করে তোলা যায়। এটাই সংবিধানের সৌন্দর্য।