১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুরগির মাংসের দাম নিম্নমুখী, চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের

চামেলি দাস
  • আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 34

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ এক ঝটকায় অনেকটা কমে গেছে মুরগির মাংসের দাম। যার ফলে ক্রেতারা খুশি হলেও কপালে ভাঁজ পোলট্রি ব্যবসায়ীদের। মাসখানেক আগেও যে মাংসের দাম ছিল কেজিতে ২২০-২৪০ টাকা, তা-ই এখন কলকাতা ও শহরতলির কোথাও কোথাও নেমে এসেছে কেজি প্রতি ১৩৫ টাকায়। রাজ্যের অন্যত্র ১৪০–১৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম কমার প্রধান কারণ রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় মুরগির বেশি উৎপাদন। প্রাণিসম্পদ বিকাশমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বিধানসভায় বলেছেন, ‘মুরগির মাংস উৎপাদনে বাংলা এখন দেশে প্রথম।’

আরও পড়ুন: রাজ্যে আগাম বর্ষার আগমন

একটা সময়ে ভিন রাজ্য থেকে মুরগি এনে বাংলায় মাংসের চাহিদা মেটাতে হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে রাজ্যে কয়েক হাজার ব্রয়লার মুরগির খামার বেড়েছে। ফলে উৎপাদনও বেড়েছে কয়েক গুণ।

আরও পড়ুন: WB Weather Update: তীব্র দাবদাহে নাজেহাল বঙ্গবাসী!

ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির কথায়, ‘রাজ্যে চাহিদার থেকে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন এখন ৪০ শতাংশ বেশি। ফলে বাজারের স্বাভাবিক নিয়মেই দাম কমতে বাধ্য।’ তবে তাঁর বক্তব্য, এমনটা মাধ্যমধ্যে হলেও দাম এতটা নামে না।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: নিহত ৩ পর্যটকের দেহ আজই আসছে দমদম বিমানবন্দরে

খামার মালিকদের যুক্তি, আগে বাংলা থেকে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ডে মুরগি যেত। কিন্তু বর্তমানে ওডিশায় ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বেড়েছে। ফলে সেখানে কম যাচ্ছে। হালফিলে চাহিদা কিছুটা কমেছে ঝাড়খণ্ড, বিহারেও।

রাজ্যেও গড় চাহিদা গত এক সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খামার মালিক বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, ‘বর্তমানে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা এতটাই বেশি যে, মুরগিদের বেশি দিন খামারে রাখতেও ভরসা হচ্ছে না। কারণ দু’-চারটে মুরগি মারা গেলে তখন লোকসান বেড়ে যাবে। সেই জন্যই মুরগি বেচে দিতে হচ্ছে। এই কারণেও দাম কমছে।’

মদনমোহন বলছেন, ‘প্রতি শ্রাবণে চাহিদা কিছুটা কমে। ফলে তখন উৎপাদনও কমানো হয়। এ বারে সেটা আষাঢ়েই হওয়ায় আমরা কিছুটা অবাক। তবে ভাদ্র মাসে চাহিদা বেড়ে যায়। তখন দাম ফের বাড়বে।’

ফেডারেশনের বক্তব্য, এই ধরনের অসংগঠিত ক্ষেত্রে খামার মালিকদের সে ভাবে কিছু নির্দেশ দেওয়া যায় না। আর এখন উৎপাদন কমালে পরে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আজ না হোক কাল, চাহিদা বাড়বেই। তখন চাইলেই জোগান বাড়ানো যাবে না। উৎপাদন কমলে এই ব্যবসায় জড়িতদের আয়ও কমে যেতে পারে।

তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন লোকসান মেনে নিতে হচ্ছে পোলট্রি ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে মুরগির পাইকারি দাম ৮০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এই দাম ১১৫ টাকা হলে খামার মালিকেরা লাভের মুখ দেখতে পারেন।

অন্তত ৯০-৯৫ টাকা হলেও লোকসান কিছুটা সামাল দেওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এ–ও বলছেন, আগে উত্তরবঙ্গ থেকে মুরগি অসমে যেত। বর্তমানে প্রশাসন সীমানা সিল করে দেওয়ায় তা বন্ধ। ব্যবসায়ীদের আবেদন, পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে যদি অসমের সীমানা খুলে দেওয়া হয়, তা হলেও কিছুটা সুরাহা হয়।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মুরগির মাংসের দাম নিম্নমুখী, চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের

আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ এক ঝটকায় অনেকটা কমে গেছে মুরগির মাংসের দাম। যার ফলে ক্রেতারা খুশি হলেও কপালে ভাঁজ পোলট্রি ব্যবসায়ীদের। মাসখানেক আগেও যে মাংসের দাম ছিল কেজিতে ২২০-২৪০ টাকা, তা-ই এখন কলকাতা ও শহরতলির কোথাও কোথাও নেমে এসেছে কেজি প্রতি ১৩৫ টাকায়। রাজ্যের অন্যত্র ১৪০–১৮০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম কমার প্রধান কারণ রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় মুরগির বেশি উৎপাদন। প্রাণিসম্পদ বিকাশমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বিধানসভায় বলেছেন, ‘মুরগির মাংস উৎপাদনে বাংলা এখন দেশে প্রথম।’

আরও পড়ুন: রাজ্যে আগাম বর্ষার আগমন

একটা সময়ে ভিন রাজ্য থেকে মুরগি এনে বাংলায় মাংসের চাহিদা মেটাতে হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে রাজ্যে কয়েক হাজার ব্রয়লার মুরগির খামার বেড়েছে। ফলে উৎপাদনও বেড়েছে কয়েক গুণ।

আরও পড়ুন: WB Weather Update: তীব্র দাবদাহে নাজেহাল বঙ্গবাসী!

ওয়েস্ট বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতির কথায়, ‘রাজ্যে চাহিদার থেকে ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন এখন ৪০ শতাংশ বেশি। ফলে বাজারের স্বাভাবিক নিয়মেই দাম কমতে বাধ্য।’ তবে তাঁর বক্তব্য, এমনটা মাধ্যমধ্যে হলেও দাম এতটা নামে না।

আরও পড়ুন: Pahalgam Terror Attack: নিহত ৩ পর্যটকের দেহ আজই আসছে দমদম বিমানবন্দরে

খামার মালিকদের যুক্তি, আগে বাংলা থেকে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ডে মুরগি যেত। কিন্তু বর্তমানে ওডিশায় ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন বেড়েছে। ফলে সেখানে কম যাচ্ছে। হালফিলে চাহিদা কিছুটা কমেছে ঝাড়খণ্ড, বিহারেও।

রাজ্যেও গড় চাহিদা গত এক সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খামার মালিক বিশ্বজিৎ মাইতি বলেন, ‘বর্তমানে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা এতটাই বেশি যে, মুরগিদের বেশি দিন খামারে রাখতেও ভরসা হচ্ছে না। কারণ দু’-চারটে মুরগি মারা গেলে তখন লোকসান বেড়ে যাবে। সেই জন্যই মুরগি বেচে দিতে হচ্ছে। এই কারণেও দাম কমছে।’

মদনমোহন বলছেন, ‘প্রতি শ্রাবণে চাহিদা কিছুটা কমে। ফলে তখন উৎপাদনও কমানো হয়। এ বারে সেটা আষাঢ়েই হওয়ায় আমরা কিছুটা অবাক। তবে ভাদ্র মাসে চাহিদা বেড়ে যায়। তখন দাম ফের বাড়বে।’

ফেডারেশনের বক্তব্য, এই ধরনের অসংগঠিত ক্ষেত্রে খামার মালিকদের সে ভাবে কিছু নির্দেশ দেওয়া যায় না। আর এখন উৎপাদন কমালে পরে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আজ না হোক কাল, চাহিদা বাড়বেই। তখন চাইলেই জোগান বাড়ানো যাবে না। উৎপাদন কমলে এই ব্যবসায় জড়িতদের আয়ও কমে যেতে পারে।

তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন লোকসান মেনে নিতে হচ্ছে পোলট্রি ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে মুরগির পাইকারি দাম ৮০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এই দাম ১১৫ টাকা হলে খামার মালিকেরা লাভের মুখ দেখতে পারেন।

অন্তত ৯০-৯৫ টাকা হলেও লোকসান কিছুটা সামাল দেওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এ–ও বলছেন, আগে উত্তরবঙ্গ থেকে মুরগি অসমে যেত। বর্তমানে প্রশাসন সীমানা সিল করে দেওয়ায় তা বন্ধ। ব্যবসায়ীদের আবেদন, পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে যদি অসমের সীমানা খুলে দেওয়া হয়, তা হলেও কিছুটা সুরাহা হয়।