২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরাইল টানা দ্বিতীয়বার জাতিসংঘের “কালো তালিকায়”, গাজায় শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা সর্বোচ্চ

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
  • / 13

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘ টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরাইলকে যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর দায়ে “কালো তালিকায়” রেখেছে। গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জাতিসংঘের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সংঘাতপীড়িত অঞ্চলে শিশুদের প্রতি সহিংসতার মাত্রা “অভূতপূর্ব” পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরেই সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

‘Children in Armed Conflict’ শীর্ষক এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরে শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর লঙ্ঘনের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ১৮ বছরের নিচে শিশুদের বিরুদ্ধে এইসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে হত্যা ও পঙ্গুত্ব, যৌন সহিংসতা, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলা ইত্যাদি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৪১,৩৭০টি গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

এর মধ্যে শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও ইসরাইলে ২,৯৫৯ শিশুর বিরুদ্ধে ৮,৫৫৪টি গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে—যার মধ্যে ২,৯৪৪ জনই ফিলিস্তিনি এবং ১৫ জন ইসরাইলি শিশু।

আরও পড়ুন: ইসরাইল থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে বিবৃতি জারি করল বিদেশ মন্ত্রক

গাজায় ইসরাইলি হামলায় ১,২৫৯ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে, যাদের অনেকেই বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৪১ জন শিশু।

আরও পড়ুন: ইরানের খামেনিকে হত্যার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য আরও অনেক বেশি সংখ্যার শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ২০২৪ সালে গাজায় আরও ৪,৪৭০ শিশুর মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করছে তারা।

অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে গত বছরে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। ওই অঞ্চলে মোট ৩,৬৮৮টি গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও, লেবাননে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গত বছর ৫০০-রও বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল এবং ইসরাইলে শিশুদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে আমি স্তম্ভিত।”

তিনি ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান—বিশেষ করে শিশুদের নিরাপত্তা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা এবং বেসামরিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ক্ষতির ঝুঁকি এড়ানোর ব্যাপারে। ইসরাইলের জাতিসংঘ মিশন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

পুনরায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ‘কাসাম ব্রিগেড’ এবং ইসলামিক জিহাদের ‘আল-কুদস ব্রিগেড’-কে।

গাজার পর শিশুদের প্রতি সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (৪,০০০+ লঙ্ঘন), সোমালিয়ায় (২,৫০০+), নাইজেরিয়ায় (প্রায় ২,৫০০) এবং হাইতিতে (২,২০০+)।

সবচেয়ে বেশি হারে সহিংসতা বেড়েছে লেবাননে (৫৪৫ শতাংশ)। এরপর আছে মোজাম্বিক (৫২৫%), হাইতি (৪৯০%), ইথিওপিয়া (২৩৫%) এবং ইউক্রেন (১০৫%)।

জাতিসংঘের এই রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী শিশুদের রক্ষা এবং দায়ী দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইসরাইল টানা দ্বিতীয়বার জাতিসংঘের “কালো তালিকায়”, গাজায় শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা সর্বোচ্চ

আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘ টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ইসরাইলকে যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর দায়ে “কালো তালিকায়” রেখেছে। গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জাতিসংঘের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সংঘাতপীড়িত অঞ্চলে শিশুদের প্রতি সহিংসতার মাত্রা “অভূতপূর্ব” পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরেই সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

‘Children in Armed Conflict’ শীর্ষক এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরে শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর লঙ্ঘনের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ১৮ বছরের নিচে শিশুদের বিরুদ্ধে এইসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে হত্যা ও পঙ্গুত্ব, যৌন সহিংসতা, স্কুল ও হাসপাতালের ওপর হামলা ইত্যাদি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ৪১,৩৭০টি গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন: গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের উপর ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৮১ জন নিহত

এর মধ্যে শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও ইসরাইলে ২,৯৫৯ শিশুর বিরুদ্ধে ৮,৫৫৪টি গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে—যার মধ্যে ২,৯৪৪ জনই ফিলিস্তিনি এবং ১৫ জন ইসরাইলি শিশু।

আরও পড়ুন: ইসরাইল থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে বিবৃতি জারি করল বিদেশ মন্ত্রক

গাজায় ইসরাইলি হামলায় ১,২৫৯ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে, যাদের অনেকেই বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৪১ জন শিশু।

আরও পড়ুন: ইরানের খামেনিকে হত্যার সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করলেন পুতিন

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য আরও অনেক বেশি সংখ্যার শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ২০২৪ সালে গাজায় আরও ৪,৪৭০ শিশুর মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করছে তারা।

অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে গত বছরে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। ওই অঞ্চলে মোট ৩,৬৮৮টি গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও, লেবাননে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গত বছর ৫০০-রও বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল এবং ইসরাইলে শিশুদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে আমি স্তম্ভিত।”

তিনি ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান—বিশেষ করে শিশুদের নিরাপত্তা, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা এবং বেসামরিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ক্ষতির ঝুঁকি এড়ানোর ব্যাপারে। ইসরাইলের জাতিসংঘ মিশন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

পুনরায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ‘কাসাম ব্রিগেড’ এবং ইসলামিক জিহাদের ‘আল-কুদস ব্রিগেড’-কে।

গাজার পর শিশুদের প্রতি সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (৪,০০০+ লঙ্ঘন), সোমালিয়ায় (২,৫০০+), নাইজেরিয়ায় (প্রায় ২,৫০০) এবং হাইতিতে (২,২০০+)।

সবচেয়ে বেশি হারে সহিংসতা বেড়েছে লেবাননে (৫৪৫ শতাংশ)। এরপর আছে মোজাম্বিক (৫২৫%), হাইতি (৪৯০%), ইথিওপিয়া (২৩৫%) এবং ইউক্রেন (১০৫%)।

জাতিসংঘের এই রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী শিশুদের রক্ষা এবং দায়ী দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।