০৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তুহিনারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ, মাথা আবৃত,  বসা যাবে না এসআই পরীক্ষায়ও!

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার
  • / 22

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ তুহিনা খাতুন। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে সোমবার এই তরুণীটি কলকাতায় এসে সরাসরি হাজির হন হাইকোর্টে। ক্ষুব্ধ তুহিনা খাতুন পুবের কলম পত্রিকাকে বলেন– অ্যাডমিট কার্ড না দেওয়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি।

আমি ও আমার মতো কয়েক শত মুসলিম মেয়ের ‘অপরাধ’ ছিল–  আমরা ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মাথা ওড়না দিয়ে আবৃত করে রেখেছিলাম। আমাদের মুখ সম্পূর্ণ অনাবৃত ছিল– যাতে পরিচয় বা চিনতে অসুবিধা না হয়। তাও ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তারা আমাদের অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করেননি। তাই আমরা বহু আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে পারিনি। এ নিয়ে আরও কিছু বঞ্চিত তরুণী কলকাতা হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা করেছেন। মাননীয় বিচারক আমাদের আবেদন উকিলের মাধ্যমে শুনেছেন। তিনি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ৬ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন: সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে রাজ্যের করা মামলা খারিজ, ‘অধিকার নেই’ বলল হাইকোর্ট

তাহলে তুহিনা খাতুন আবার কেন হাইকোর্টে এসেছেন? এই সম্পর্কে তুহিনার বক্তব্য– আমি ও আমার মতো আরও বেশ কিছু তরুণী ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলাম। ৫ ডিসেম্বর এই সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি এবং আমার মতো আরও বেশ কিছু সংখ্যালঘু তরুণী অবাক হয়ে দেখলাম– এবারও পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড আমাদের আবেদনপত্রের পাশে লিখে দিয়েছে ‘রিজেক্টেড’। কিন্তু কেন আমাদের আবেদনপত্র বাতিল করা হল– তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। খোঁজ করে জানতে পারলাম–  কারণ সেই একই। আমাদের মুখ অনাবৃত থাকলেও মাথা ওড়না দিয়ে ঢাকা রয়েছে। এ সম্পর্কে পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে ফোন করলে একজন বোর্ড সদস্য বলেন–  নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীরা কেউই মস্তক আবৃত করতে পারবে না। আর এই জন্যই বেশ কিছু মহিলা প্রার্থীকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: মানিকের স্ত্রী- পুত্র মামলায় হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে ইডি

তিনি আরও বলেন–  আমরা সাব-ইন্সপেক্টর পদের জন্য মাথা আবৃত করা কাউকে যদি অ্যাডমিট কার্ড দিয়ে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিই– তাহলে কনস্টেবল পরীক্ষায় যাদের বসতে দেওয়া হয়নি তাদের মামলাটি জোরদার হবে। তাই সাব-ইন্সপেক্টর পদের পরীক্ষার জন্য মাথা আবৃত করা কাউকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। তুহিনা খাতুন পুবের কলম পত্রিকাকে জানান– তাই আমরা সম্মানীয় হাইকোর্টের কাছে আবেদন করার জন্য কলকাতায় এসেছি।

আরও পড়ুন: ‘ইন্ডিয়া’ জোটে আপত্তি! ২৬টি রাজনৈতিক দল ও কমিশনকে নোটিশ হাই কোর্টের

তুহিনা কেরল হাইকোর্টের রায়টির কথাও উল্লেখ করেন। নিট পরীক্ষায় হিজাব নিয়ে একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কেরল হাইকোর্ট রায় দেয়– জোর করে কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া যাবে না। কিন্তু ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড কেরল হাইকোর্টের রায়টিকেও মানছে না।

তুহিনা খাতুনের একজন অভিভাবক পুবের কলমকে বলেন–  পুলিশরাও তো মাথায় ক্যাপ পরে। উচ্চপদাধিকারিরা পরেন হ্যাট। তাঁদের গুরুদায়িত্ব পালনে তো কোনও অসুবিধা হয় না! শুধু শুধু মুসলিম মেয়েদের নিয়মের কথা তুলে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? শিখদের ক্ষেত্রেও তো পাগড়ি পরা ও দাড়ি রাখার ছাড় রয়েছে।

পুবের কলমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বহু অমুসলিম বুদ্ধিজীবী বলেছেন– সামান্য অজুহাতে মুসলিম মেয়েদের এভাবে বঞ্চিত করা উচিত নয়। বরং মুসলিম মেয়েদের আবেদনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। কারণ– তারা পুরনো প্রথা ভেঙে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিতে এগিয়ে আসছে। তাদের এভাবে নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়।

তুহিনা বলেন– আমরা এখন অপেক্ষায় আছি– হাইকোর্ট ৫ ডিসেম্বর পরীক্ষার আগেই আবেদনটি গ্রহণ করে আমাদের অ্যাডমিট কার্ড দিতে পুলিশ বোর্ডকে নির্দেশ দেবে।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

তুহিনারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ, মাথা আবৃত,  বসা যাবে না এসআই পরীক্ষায়ও!

আপডেট : ১ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার

পুবের কলম প্রতিবেদকঃ তুহিনা খাতুন। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থেকে সোমবার এই তরুণীটি কলকাতায় এসে সরাসরি হাজির হন হাইকোর্টে। ক্ষুব্ধ তুহিনা খাতুন পুবের কলম পত্রিকাকে বলেন– অ্যাডমিট কার্ড না দেওয়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি।

আমি ও আমার মতো কয়েক শত মুসলিম মেয়ের ‘অপরাধ’ ছিল–  আমরা ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মাথা ওড়না দিয়ে আবৃত করে রেখেছিলাম। আমাদের মুখ সম্পূর্ণ অনাবৃত ছিল– যাতে পরিচয় বা চিনতে অসুবিধা না হয়। তাও ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তারা আমাদের অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু করেননি। তাই আমরা বহু আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে পারিনি। এ নিয়ে আরও কিছু বঞ্চিত তরুণী কলকাতা হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই মামলা করেছেন। মাননীয় বিচারক আমাদের আবেদন উকিলের মাধ্যমে শুনেছেন। তিনি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ৬ জানুয়ারি।

আরও পড়ুন: সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে রাজ্যের করা মামলা খারিজ, ‘অধিকার নেই’ বলল হাইকোর্ট

তাহলে তুহিনা খাতুন আবার কেন হাইকোর্টে এসেছেন? এই সম্পর্কে তুহিনার বক্তব্য– আমি ও আমার মতো আরও বেশ কিছু তরুণী ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেছিলাম। ৫ ডিসেম্বর এই সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি এবং আমার মতো আরও বেশ কিছু সংখ্যালঘু তরুণী অবাক হয়ে দেখলাম– এবারও পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড আমাদের আবেদনপত্রের পাশে লিখে দিয়েছে ‘রিজেক্টেড’। কিন্তু কেন আমাদের আবেদনপত্র বাতিল করা হল– তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। খোঁজ করে জানতে পারলাম–  কারণ সেই একই। আমাদের মুখ অনাবৃত থাকলেও মাথা ওড়না দিয়ে ঢাকা রয়েছে। এ সম্পর্কে পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে ফোন করলে একজন বোর্ড সদস্য বলেন–  নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীরা কেউই মস্তক আবৃত করতে পারবে না। আর এই জন্যই বেশ কিছু মহিলা প্রার্থীকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: মানিকের স্ত্রী- পুত্র মামলায় হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে ইডি

তিনি আরও বলেন–  আমরা সাব-ইন্সপেক্টর পদের জন্য মাথা আবৃত করা কাউকে যদি অ্যাডমিট কার্ড দিয়ে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিই– তাহলে কনস্টেবল পরীক্ষায় যাদের বসতে দেওয়া হয়নি তাদের মামলাটি জোরদার হবে। তাই সাব-ইন্সপেক্টর পদের পরীক্ষার জন্য মাথা আবৃত করা কাউকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। তুহিনা খাতুন পুবের কলম পত্রিকাকে জানান– তাই আমরা সম্মানীয় হাইকোর্টের কাছে আবেদন করার জন্য কলকাতায় এসেছি।

আরও পড়ুন: ‘ইন্ডিয়া’ জোটে আপত্তি! ২৬টি রাজনৈতিক দল ও কমিশনকে নোটিশ হাই কোর্টের

তুহিনা কেরল হাইকোর্টের রায়টির কথাও উল্লেখ করেন। নিট পরীক্ষায় হিজাব নিয়ে একই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কেরল হাইকোর্ট রায় দেয়– জোর করে কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া যাবে না। কিন্তু ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড কেরল হাইকোর্টের রায়টিকেও মানছে না।

তুহিনা খাতুনের একজন অভিভাবক পুবের কলমকে বলেন–  পুলিশরাও তো মাথায় ক্যাপ পরে। উচ্চপদাধিকারিরা পরেন হ্যাট। তাঁদের গুরুদায়িত্ব পালনে তো কোনও অসুবিধা হয় না! শুধু শুধু মুসলিম মেয়েদের নিয়মের কথা তুলে কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে? শিখদের ক্ষেত্রেও তো পাগড়ি পরা ও দাড়ি রাখার ছাড় রয়েছে।

পুবের কলমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বহু অমুসলিম বুদ্ধিজীবী বলেছেন– সামান্য অজুহাতে মুসলিম মেয়েদের এভাবে বঞ্চিত করা উচিত নয়। বরং মুসলিম মেয়েদের আবেদনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত। কারণ– তারা পুরনো প্রথা ভেঙে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিতে এগিয়ে আসছে। তাদের এভাবে নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়।

তুহিনা বলেন– আমরা এখন অপেক্ষায় আছি– হাইকোর্ট ৫ ডিসেম্বর পরীক্ষার আগেই আবেদনটি গ্রহণ করে আমাদের অ্যাডমিট কার্ড দিতে পুলিশ বোর্ডকে নির্দেশ দেবে।