২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, রবিবার
  • / 29

এ হাসানঃ রাজস্থানের উদয়পুরে দর্জি কানহাইয়া লাল-এর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এর মধ্যেও স্বস্তির খবর হচ্ছে, এনআইএ এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভার নিয়েছে এবং শুধু ঘটনাস্থলের দুই খুনিকে নয়, তাদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও ৫-৬ জনকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে। এছাড়া রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার দর্জি কানহাইয়া লাল-এর পরিবারকে চাকরি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। রাজস্থান সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট নিহতের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা সহায়তা দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কিছু উদ্যোগী এই পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকারও বেশি সংগ্রহ করেছেন বলে মিডিয়াকে জানিয়েছেন।

যদিও বলা হচ্ছে কানহাইয়া লাল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে খুবই অশালীন পোস্ট করছিলেন এবং এজন্য তাকে পুলিশ শুধু তাকে সতর্ক করেনি, গ্রেফতারও করেছিল, কিন্তু তবুও তাকে হত্যা করা এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচার করা খুবই এক গর্হিত ও বড় অপরাধ। সকলেই আশা করছেন, এনআইএ দ্রুত তদন্ত করছে এবং দ্রুত অপরাধীদের আদালত শাস্তি ঘোষণা করবে।

আরও পড়ুন: ঈদের নামায চলাকালীন বৃদ্ধের গলায় চাকুর কোপ: হরিশ্চন্দ্রপুরে গ্রেফতার অভিযুক্ত যুবক

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?
ঘাতক শম্ভুলাল রেগর

রাজস্থানে একই ধরনের আর একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল প্রায় ৫ বছর আগে। আর তার ভিক্টিমের সঙ্গে আমাদের বাংলার গরিব মানুষদের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু নিষ্ঠুরভাবে নিহত নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মালদহের আফরাজুল প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও বিচার পায়নি। ৫ বছর ধরে নাকি বিচারপর্ব শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়ে গেছে। আর নিষ্ঠুর ঘাতক শম্ভু লাল রেগরের বয়ান গ্রহণ করা এখনও চলছে! এই খুনির বয়ান গ্রহণ করতে আরও কয় বছর লাগবে তারও কোনও নিশ্চয়তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।

আরও পড়ুন: দাম ছয় হাজার টাকা কেজি! দুর্মূল্য মিয়াজাকি আম ফলিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন ঝন্টু সরকার

হত্যার দিন কি ঘটেছিল? দিনটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭। অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কালোদিন। ঘটনাস্থল ছিল উদয়পুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানের রাজসামন্দ শহরের কাছে। ওই জায়গায় বেশকিছু বাংলাভাষী মুসলিম মজদুর কাজের জন্য অবস্থান করতেন। এরা মূলত মালদহের লোক।

আরও পড়ুন: মালদায় করোনা আক্রান্ত ২ বছরের শিশু

 

জেলায় কাজ না পেয়ে তাঁরা এভাবে বিভিন্ন প্রদেশে জানা-অজানা জায়গায় প্রবাসী মজদুর হিসেবে রোজগারের জন্য বহুদিন ধরে যান। মালদহের কালিয়াচক থানার সৈয়দপুর গ্রামের মজদুর মুহাম্মদ আফরাজুলও এভাবে পাড়ি দিয়েছিলেন রাজসামন্দে। বেশকিছু বছর ধরে আফরাজুল এখানে মূলত নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। পরে তাঁর গ্রাম ও আশপাশের জায়গা থেকে আরও বাংলাভাষী মুসলিম মজদুররা রোজগারের জন্য সেখানে চলে আসেন এবং ওই বাঙালি শ্রমিকদের ছোটখাটো কন্ট্রাক্টর হিসেবে তিনি কাজ করতে থাকেন।

 

ঘটনার দিন ৬ ডিসেম্বর শম্ভু লাল রেগর আফরাজুলকে মোবাইলে ফোন করে ‘কাজের জন্য’ একটি আপাত নির্জন এলাকায় ডেকে পাঠান। রেগর ছিলেন আফরাজুলের পূর্ব পরিচিত। তাই তিনি বাইকে করে ওই স্থানে হাজির হন। ঘাতক শম্ভু লাল রেগরও বাইকে করে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আফরাজুল একটু এগিয়ে যেতে বলে তাঁর বাইকে রাখা ব্যাগ থেকে একটি কুড়াল বের করেন।

এরপরই শম্ভু লাল ছুটে পিছন থেকে আফরাজুলকে কুড়াল দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন। ভিডিয়োতে দেখা যায়, আফরাজুল মাটিতে পড়ে গিয়েও বার বার শম্ভু লালকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ভাই তুমি আমাকে কেন মারছো? শম্ভু লাল তাঁর এক ১৪-১৫ বছরের আত্মীয়কে নিয়োগ করেছিল পুরো ঘটনার ভিডিয়োটি তৈরি করতে। আফরাজুলের কাকুতিভরা প্রশ্নের কারণ, শম্ভু লালের সঙ্গে তাঁর কোনও বিবাদ বা বিতর্ক ছিল না।

 

তাঁর একমাত্র অপরাধ ছিল, আফরাজুল একজন মুসলিম। আফরাজুলকে ধর্ম তুলে অকথ্য গালাগাল দিতে দিতে শম্ভু লাল এবার জীবন্ত অবস্থাতেই তাঁর গায়ে সঙ্গে নিয়ে আসা পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে যায় বাঙালি শ্রমিক আফরাজুল। এরপর ওই নৃশংস ঘাতক শম্ভু লাল আফরাজুলকে কুড়াল দিয়ে কোপানো এবং তাঁকে জীবন্ত দগ্ধ করার ভিডিয়োটি গর্বের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে ঘৃণা ছড়ানো নানা বক্তব্য রাখেন। বর্বরতাসম্পন্ন এই ভিডিয়োটি সারা দুনিয়াতে ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হয়।

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?
নিহত আফরাজুল

সেইসময় রাজস্থানে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। পুলিশ এসে শম্ভু লালকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ ফরেন্সিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলকে সংরক্ষিত করেনি। এর বছর দু পর বিজেপি কংগ্রেসের অশোক গেহলটের কাছে ক্ষমতাচ্যুত হয়। কিন্তু গেহলট সরকারও শম্ভু লালের এই নৃশংস হত্যার ব্যাপারে চুপ করে থাকাই বাঞ্ছনীয় মনে করে। শম্ভু লাল কেন এই হত্যা তার জন্য বেশকিছু গল্প ফেঁদে ছিলেন। এর একটি হল কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০, ইসলামী সন্ত্রাস, লাভ জিহাদ ইত্যাদি। কিন্তু রাজসামন্দে তৎকালীন পুলিশ অফিসার মনোজ কুমার মিডিয়াকে বলেন, এইসবই মিথ্যা কাহিনী। একজন নারীর সঙ্গে শম্ভু লালের নিজের অবৈধ সম্পর্ক লুকোবার জন্য সে এইসব কথা বলেন।

মামলাটি খুব ধীর লয়ে চললেও শম্ভু লাল কিন্তু জেলে বসেও চুপ করে নেই। সে মাঝখানে ঘোষণা দিয়েছিল যে, জেল থেকেই হিন্দুত্ববাদের নীতি নিয়ে নির্বাচনে লড়বে। ইতিমধ্যে শম্ভু লালের চিন্তাধারায় বিশ্বাসী হাজার হাজার ভক্তও জুটে গেছে। তারা শম্ভু লালের সমর্থনে বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদিও করে চলেছে।

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?
তাই অনেকে বলছেন, দর্জি কানহাইয়া লাল এবং নির্মাণ শ্রমিক আফরাজুলের ঘাতকদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেওয়া হোক। কারণ, তারা যে নৃশংস খুনি তার প্রমাণ সংগ্রহের তেমন কোনও প্রয়োজন নেই। নিজেদের অপরাধ তারা নিজেরাই ভিডিয়োতে ধারণ করে ইন্টারনেটে প্রচার করেছে। তাই দাবি উঠেছে,শম্ভু লাল রেগরেরও খুনের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হোক। তদন্ত করে খুঁজে বের করা হোক এই হত্যার সঙ্গে আরও কারা কারা যুক্ত, এর বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বা ষড়যন্ত্র কি থাকতে পারে। এছাড়া রাজস্থান সরকার আফরাজুলের পরিবারকেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করুক। তবেই বিচার বাণী সফল হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, রবিবার

এ হাসানঃ রাজস্থানের উদয়পুরে দর্জি কানহাইয়া লাল-এর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এর মধ্যেও স্বস্তির খবর হচ্ছে, এনআইএ এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ভার নিয়েছে এবং শুধু ঘটনাস্থলের দুই খুনিকে নয়, তাদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আরও ৫-৬ জনকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছে। এছাড়া রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার দর্জি কানহাইয়া লাল-এর পরিবারকে চাকরি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। রাজস্থান সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট নিহতের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা সহায়তা দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কিছু উদ্যোগী এই পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকারও বেশি সংগ্রহ করেছেন বলে মিডিয়াকে জানিয়েছেন।

যদিও বলা হচ্ছে কানহাইয়া লাল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে খুবই অশালীন পোস্ট করছিলেন এবং এজন্য তাকে পুলিশ শুধু তাকে সতর্ক করেনি, গ্রেফতারও করেছিল, কিন্তু তবুও তাকে হত্যা করা এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচার করা খুবই এক গর্হিত ও বড় অপরাধ। সকলেই আশা করছেন, এনআইএ দ্রুত তদন্ত করছে এবং দ্রুত অপরাধীদের আদালত শাস্তি ঘোষণা করবে।

আরও পড়ুন: ঈদের নামায চলাকালীন বৃদ্ধের গলায় চাকুর কোপ: হরিশ্চন্দ্রপুরে গ্রেফতার অভিযুক্ত যুবক

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?
ঘাতক শম্ভুলাল রেগর

রাজস্থানে একই ধরনের আর একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল প্রায় ৫ বছর আগে। আর তার ভিক্টিমের সঙ্গে আমাদের বাংলার গরিব মানুষদের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু নিষ্ঠুরভাবে নিহত নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মালদহের আফরাজুল প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও বিচার পায়নি। ৫ বছর ধরে নাকি বিচারপর্ব শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়ে গেছে। আর নিষ্ঠুর ঘাতক শম্ভু লাল রেগরের বয়ান গ্রহণ করা এখনও চলছে! এই খুনির বয়ান গ্রহণ করতে আরও কয় বছর লাগবে তারও কোনও নিশ্চয়তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।

আরও পড়ুন: দাম ছয় হাজার টাকা কেজি! দুর্মূল্য মিয়াজাকি আম ফলিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন ঝন্টু সরকার

হত্যার দিন কি ঘটেছিল? দিনটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭। অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কালোদিন। ঘটনাস্থল ছিল উদয়পুর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানের রাজসামন্দ শহরের কাছে। ওই জায়গায় বেশকিছু বাংলাভাষী মুসলিম মজদুর কাজের জন্য অবস্থান করতেন। এরা মূলত মালদহের লোক।

আরও পড়ুন: মালদায় করোনা আক্রান্ত ২ বছরের শিশু

 

জেলায় কাজ না পেয়ে তাঁরা এভাবে বিভিন্ন প্রদেশে জানা-অজানা জায়গায় প্রবাসী মজদুর হিসেবে রোজগারের জন্য বহুদিন ধরে যান। মালদহের কালিয়াচক থানার সৈয়দপুর গ্রামের মজদুর মুহাম্মদ আফরাজুলও এভাবে পাড়ি দিয়েছিলেন রাজসামন্দে। বেশকিছু বছর ধরে আফরাজুল এখানে মূলত নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। পরে তাঁর গ্রাম ও আশপাশের জায়গা থেকে আরও বাংলাভাষী মুসলিম মজদুররা রোজগারের জন্য সেখানে চলে আসেন এবং ওই বাঙালি শ্রমিকদের ছোটখাটো কন্ট্রাক্টর হিসেবে তিনি কাজ করতে থাকেন।

 

ঘটনার দিন ৬ ডিসেম্বর শম্ভু লাল রেগর আফরাজুলকে মোবাইলে ফোন করে ‘কাজের জন্য’ একটি আপাত নির্জন এলাকায় ডেকে পাঠান। রেগর ছিলেন আফরাজুলের পূর্ব পরিচিত। তাই তিনি বাইকে করে ওই স্থানে হাজির হন। ঘাতক শম্ভু লাল রেগরও বাইকে করে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আফরাজুল একটু এগিয়ে যেতে বলে তাঁর বাইকে রাখা ব্যাগ থেকে একটি কুড়াল বের করেন।

এরপরই শম্ভু লাল ছুটে পিছন থেকে আফরাজুলকে কুড়াল দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকেন। ভিডিয়োতে দেখা যায়, আফরাজুল মাটিতে পড়ে গিয়েও বার বার শম্ভু লালকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ভাই তুমি আমাকে কেন মারছো? শম্ভু লাল তাঁর এক ১৪-১৫ বছরের আত্মীয়কে নিয়োগ করেছিল পুরো ঘটনার ভিডিয়োটি তৈরি করতে। আফরাজুলের কাকুতিভরা প্রশ্নের কারণ, শম্ভু লালের সঙ্গে তাঁর কোনও বিবাদ বা বিতর্ক ছিল না।

 

তাঁর একমাত্র অপরাধ ছিল, আফরাজুল একজন মুসলিম। আফরাজুলকে ধর্ম তুলে অকথ্য গালাগাল দিতে দিতে শম্ভু লাল এবার জীবন্ত অবস্থাতেই তাঁর গায়ে সঙ্গে নিয়ে আসা পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে যায় বাঙালি শ্রমিক আফরাজুল। এরপর ওই নৃশংস ঘাতক শম্ভু লাল আফরাজুলকে কুড়াল দিয়ে কোপানো এবং তাঁকে জীবন্ত দগ্ধ করার ভিডিয়োটি গর্বের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে ঘৃণা ছড়ানো নানা বক্তব্য রাখেন। বর্বরতাসম্পন্ন এই ভিডিয়োটি সারা দুনিয়াতে ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হয়।

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?
নিহত আফরাজুল

সেইসময় রাজস্থানে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। পুলিশ এসে শম্ভু লালকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তবে পুলিশ ফরেন্সিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলকে সংরক্ষিত করেনি। এর বছর দু পর বিজেপি কংগ্রেসের অশোক গেহলটের কাছে ক্ষমতাচ্যুত হয়। কিন্তু গেহলট সরকারও শম্ভু লালের এই নৃশংস হত্যার ব্যাপারে চুপ করে থাকাই বাঞ্ছনীয় মনে করে। শম্ভু লাল কেন এই হত্যা তার জন্য বেশকিছু গল্প ফেঁদে ছিলেন। এর একটি হল কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০, ইসলামী সন্ত্রাস, লাভ জিহাদ ইত্যাদি। কিন্তু রাজসামন্দে তৎকালীন পুলিশ অফিসার মনোজ কুমার মিডিয়াকে বলেন, এইসবই মিথ্যা কাহিনী। একজন নারীর সঙ্গে শম্ভু লালের নিজের অবৈধ সম্পর্ক লুকোবার জন্য সে এইসব কথা বলেন।

মামলাটি খুব ধীর লয়ে চললেও শম্ভু লাল কিন্তু জেলে বসেও চুপ করে নেই। সে মাঝখানে ঘোষণা দিয়েছিল যে, জেল থেকেই হিন্দুত্ববাদের নীতি নিয়ে নির্বাচনে লড়বে। ইতিমধ্যে শম্ভু লালের চিন্তাধারায় বিশ্বাসী হাজার হাজার ভক্তও জুটে গেছে। তারা শম্ভু লালের সমর্থনে বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদিও করে চলেছে।

মালদহের আফরাজুল কেন রাজস্থানে বিচার পাচ্ছে না?
তাই অনেকে বলছেন, দর্জি কানহাইয়া লাল এবং নির্মাণ শ্রমিক আফরাজুলের ঘাতকদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেওয়া হোক। কারণ, তারা যে নৃশংস খুনি তার প্রমাণ সংগ্রহের তেমন কোনও প্রয়োজন নেই। নিজেদের অপরাধ তারা নিজেরাই ভিডিয়োতে ধারণ করে ইন্টারনেটে প্রচার করেছে। তাই দাবি উঠেছে,শম্ভু লাল রেগরেরও খুনের তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হোক। তদন্ত করে খুঁজে বের করা হোক এই হত্যার সঙ্গে আরও কারা কারা যুক্ত, এর বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বা ষড়যন্ত্র কি থাকতে পারে। এছাড়া রাজস্থান সরকার আফরাজুলের পরিবারকেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করুক। তবেই বিচার বাণী সফল হবে।