১৫ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওরিও বিস্কুট হালাল না হারাম, বিতর্ক আরব দুনিয়াতে  

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৭ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার
  • / 342

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: সউদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওরিও বিস্কুট সংক্রান্ত একটি বিতর্ক প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা শেয়ার করা হচ্ছে যে ওরিও বিস্কুটে শুকরের মাংস এবং অ্যালকোহল রয়েছে। এই দু’টি জিনিসই ইসলামে নিষিদ্ধ, যাকে হারাম বলা হয়।

 

ওরিও বিস্কুট হালাল নাকি হারাম? আরব দেশেও সমান জনপ্রিয় ওরিও বিস্কুট। এই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার পর দু’টি আরব দেশ সউদি আরব এবং আরব আমিরাত সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সউদি আরবের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি জানিয়েছে, ওরিও বিস্কুটে মদ ও শুকরের মাংসের উপাদান নিয়ে যেটা ছড়ানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। আমাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে হারাম উপাদান পাওয়া যায়নি।

 

এ নিয়ে আরব দেশে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ জারি করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া ও পরিবেশ মন্ত্রক বলেছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ওরিও বিস্কুট হালাল নয়, কারণ এতে শুকরের মাংস এবং অ্যালকোহল রয়েছে। কিন্তু এটি একটি ভুল তথ্য।’ মন্ত্রকের তরফে আরও বলা হয়েছে, বিস্কুটে চর্বি ও চর্বি জাতীয় প্রাণী সংক্রান্ত কোনও উপাদান নেই। ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে, প্যাকেটের গায়ে লেখা জিনিস থেকেই এই বিস্কুট তৈরি।

 

তবে আরব দেশে বিস্কুট নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয় ওরিও বিস্কুট ব্র্যান্ডের মালিক আমেরিকার কোম্পানি মনডেলেজ ইন্টারন্যাশনাল। কোম্পানি জানায়, এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। আমাদের কোম্পানিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির জন্য, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির জন্য এবং পাকিস্তানের জন্য যেসব বিস্কুট তৈরি হয় সেগুলিতে মদ বা শুকরের চর্বি নেই। আমরা হালাল সার্টিফিকেট নিয়ে থাকি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সউদি আরব এবং বাহারাইনে আমাদের বিস্কুট তৈরির কারখানা রয়েছে। ওরিও কোম্পানির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে এই বিস্কুট বিশ্বের বাজারে চলছে। তবে আমরা বাজার অনুযায়ী বিস্কুট তৈরির সময় সেখানকার মানুষদের ধর্ম, মনোভাব ইত্যাদি ফ্যাক্টর অবশ্যই বিচার করে থাকি। নির্দিষ্ট বাজারে আমরা হালাল খাদ্য অবশ্যই সরবরাহ করে থাকি। তবে আরব আমিরাতের বক্তব্য অনুযায়ী, আরব দেশের জন্য এই বিস্কুট মদ ও পর্ক মুক্ত  হলেও আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন সহ অন্যান্য দেশের জন্য হালাল সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

 

আমেরিকার কোম্পানির এই বক্তব্য জানার পর ভারত ও বাংলাদেশের মুসলিমরা ভাবছেন তাহলে এতদিন তারা এই ওরিও বিস্কুট বিশ্বাস করে খেয়ে আসছেন, যেটি হালাল  সার্টিফিকেশনের বাইরে। প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে, তাহলে কি আমেরিকার কোম্পানি আরব ও পাকিস্তানের মুসলমানদের মুসলমান ভাবে? আর অন্যান্য দেশের মুসলমানদের তারা গোপনে হালাল নয় এমন বিস্কুট খাওয়াচ্ছে?

 

বিস্কুটে অ্যালকোহলের উপস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা বলেন, ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় যে এতে অ্যালকোহল নেই। মন্ত্রণালয় বলেছে যে, দেশে আসা সমস্ত খাদ্য উপাদান নিরাপত্তার মান বজায় রেখেই আনা হয়। মন্ত্রণালয় জনসাধারণকে যাচাই না করে কোনও সংবাদ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

 

আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশে আমদানি করা বিস্কুটের সমস্ত ব্যাচ পরীক্ষা করা হয়  এবং তাদের নথি পরীক্ষা করা হয়। কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, ‘এমন অনেক পণ্য রয়েছে যাতে অল্প পরিমাণে ইথানল থাকে, যা প্রাকৃতিক গাঁজনে তৈরি হয়। এটি খাদ্য পণ্যে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে যে, ওরিও বিস্কুট সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমস্ত মান মেনে চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মান অনুযায়ী, খাবার এবং পানীয়তে অ্যালকোহল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আরব ও পাকিস্তানের মুসলিমদের জন্য কোম্পানির এই আশ্বাসবাণী শোনার পর অন্যান্য দেশের মুসলিমরা কি ভাববে সেটাই এখন লক্ষ ডলারের প্রশ্ন।

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ওরিও বিস্কুট হালাল না হারাম, বিতর্ক আরব দুনিয়াতে  

আপডেট : ৭ জানুয়ারী ২০২৩, শনিবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: সউদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওরিও বিস্কুট সংক্রান্ত একটি বিতর্ক প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বার্তা শেয়ার করা হচ্ছে যে ওরিও বিস্কুটে শুকরের মাংস এবং অ্যালকোহল রয়েছে। এই দু’টি জিনিসই ইসলামে নিষিদ্ধ, যাকে হারাম বলা হয়।

 

ওরিও বিস্কুট হালাল নাকি হারাম? আরব দেশেও সমান জনপ্রিয় ওরিও বিস্কুট। এই বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার পর দু’টি আরব দেশ সউদি আরব এবং আরব আমিরাত সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সউদি আরবের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি জানিয়েছে, ওরিও বিস্কুটে মদ ও শুকরের মাংসের উপাদান নিয়ে যেটা ছড়ানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। আমাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে হারাম উপাদান পাওয়া যায়নি।

 

এ নিয়ে আরব দেশে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ জারি করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া ও পরিবেশ মন্ত্রক বলেছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ওরিও বিস্কুট হালাল নয়, কারণ এতে শুকরের মাংস এবং অ্যালকোহল রয়েছে। কিন্তু এটি একটি ভুল তথ্য।’ মন্ত্রকের তরফে আরও বলা হয়েছে, বিস্কুটে চর্বি ও চর্বি জাতীয় প্রাণী সংক্রান্ত কোনও উপাদান নেই। ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে, প্যাকেটের গায়ে লেখা জিনিস থেকেই এই বিস্কুট তৈরি।

 

তবে আরব দেশে বিস্কুট নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয় ওরিও বিস্কুট ব্র্যান্ডের মালিক আমেরিকার কোম্পানি মনডেলেজ ইন্টারন্যাশনাল। কোম্পানি জানায়, এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। আমাদের কোম্পানিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির জন্য, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির জন্য এবং পাকিস্তানের জন্য যেসব বিস্কুট তৈরি হয় সেগুলিতে মদ বা শুকরের চর্বি নেই। আমরা হালাল সার্টিফিকেট নিয়ে থাকি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সউদি আরব এবং বাহারাইনে আমাদের বিস্কুট তৈরির কারখানা রয়েছে। ওরিও কোম্পানির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে এই বিস্কুট বিশ্বের বাজারে চলছে। তবে আমরা বাজার অনুযায়ী বিস্কুট তৈরির সময় সেখানকার মানুষদের ধর্ম, মনোভাব ইত্যাদি ফ্যাক্টর অবশ্যই বিচার করে থাকি। নির্দিষ্ট বাজারে আমরা হালাল খাদ্য অবশ্যই সরবরাহ করে থাকি। তবে আরব আমিরাতের বক্তব্য অনুযায়ী, আরব দেশের জন্য এই বিস্কুট মদ ও পর্ক মুক্ত  হলেও আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন সহ অন্যান্য দেশের জন্য হালাল সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

 

আমেরিকার কোম্পানির এই বক্তব্য জানার পর ভারত ও বাংলাদেশের মুসলিমরা ভাবছেন তাহলে এতদিন তারা এই ওরিও বিস্কুট বিশ্বাস করে খেয়ে আসছেন, যেটি হালাল  সার্টিফিকেশনের বাইরে। প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে, তাহলে কি আমেরিকার কোম্পানি আরব ও পাকিস্তানের মুসলমানদের মুসলমান ভাবে? আর অন্যান্য দেশের মুসলমানদের তারা গোপনে হালাল নয় এমন বিস্কুট খাওয়াচ্ছে?

 

বিস্কুটে অ্যালকোহলের উপস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা বলেন, ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় যে এতে অ্যালকোহল নেই। মন্ত্রণালয় বলেছে যে, দেশে আসা সমস্ত খাদ্য উপাদান নিরাপত্তার মান বজায় রেখেই আনা হয়। মন্ত্রণালয় জনসাধারণকে যাচাই না করে কোনও সংবাদ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

 

আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশে আমদানি করা বিস্কুটের সমস্ত ব্যাচ পরীক্ষা করা হয়  এবং তাদের নথি পরীক্ষা করা হয়। কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, ‘এমন অনেক পণ্য রয়েছে যাতে অল্প পরিমাণে ইথানল থাকে, যা প্রাকৃতিক গাঁজনে তৈরি হয়। এটি খাদ্য পণ্যে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে যে, ওরিও বিস্কুট সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমস্ত মান মেনে চলে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মান অনুযায়ী, খাবার এবং পানীয়তে অ্যালকোহল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আরব ও পাকিস্তানের মুসলিমদের জন্য কোম্পানির এই আশ্বাসবাণী শোনার পর অন্যান্য দেশের মুসলিমরা কি ভাববে সেটাই এখন লক্ষ ডলারের প্রশ্ন।